কক্সবাজার অফিস
২০১৫ সালে মামলায় আসামি হবার পর পালিয়ে যান বিদেশে। সেখান থেকে গেল এক বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পালিয়ে বেড়ালেও শেষ রক্ষা হলো না জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সক্রিয় সদস্য নুরুল ইসলাম ওরফে জঙ্গি হাওলাদারের (৪০)।
রোববার (৯ অক্টোবর) তাকে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার।
গ্রেপ্তার নুরুল আবছার হাওলাদার (৪০) সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার প্রতাপনগর ইউপির কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আক্কাছ আলী হাওলাদারের ছেলে।
র্যাব জানায়, ২০১৫ সালে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলাগুলোতে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে এবং আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত নুরুল আফছার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ২০০৯ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সন্দেহভাজন কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশ দ্বারা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয় এবং ০১ মাস কারাবাস শেষে জামিনে মুক্তি পায়।
পরবর্তীতে তিনি শীর্ষ স্থানীয় এক জঙ্গি নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম এলাকায় নবগঠিত জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেড এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে একটি রাষ্ট্রবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল হেফাজত আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে।
এই রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন গহীন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে এবং হাটহাজারীতে অবস্থিত মাদ্রাসাতু আবু বক্কর (রা.) এ রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে। গ্রেপ্তারকৃত নুরুল আবছার মূলত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম অর্থায়নের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ রিক্রুট ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আনা নেওয়ার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতো।
পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রশিক্ষণ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট প্রেরণ করতো।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাটহাজারি ও বাঁশখালীতে তাদের গোপন আস্তানায় র্যাবের অভিযানে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মোট ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়। ওই সময় গ্রেপ্তারকৃত আবছার ঢাকায় অবস্থান করায় তাকে এবং কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনার পর আবছার পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আত্মগোপনে চলে যায় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে সে শীর্ষস্থানীয় এক নেতার পরামর্শে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে পলায়ন করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে অবস্থান করার পর বছর খানেক আগে তিনি দেশে ফিরে এসে ঢাকায় আত্মগোপন করে থাকে। দীর্ঘদিন কোর্টে উপস্থিত না হওয়াতে আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। বিদেশে অবস্থানকালীন দেশে অবস্থানরত তার পৃষ্ঠপোষকরা হুন্ডির মাধ্যমে তাকে টাকা পাঠাতেন।
বিদেশ থেকে দেশে আসার পর তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় হামজা ব্রিগেডকে পুনরায় সংগঠিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় তার তৎপরতা শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে কিছুদিন ধরে তিনি কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন,গতকাল রোববার সকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি দল কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে নুরুল আবছার (৪০) কে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।