নিয়তই বদলে যাচ্ছে রাজশাহী মহানগরী। প্রশস্ত সড়ক, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নির্মল বায়ু, সবুজ আর ফুলে ফুলে সাজানো সড়ক বিভাজক, কারুকাজ, উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, দৃষ্টিনন্দন রাতের আলোকায়ন-এই নগরীকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেশসেরা শহরে পরিণত হয়েছে রাজশাহী মহানগরী। গত চার বছরে সুনিপুণভাবে রাজশাহীকে সাজিয়ে তুলেছেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতিবিজড়িত পদ্মা বিধৌত ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গ-কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। ২০১৮ সালে ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০১৮ সালের এই দিনে (৫ অক্টোবর) শপথ নেন তিনি। শপথের পর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তিনি। রাসিকের শৃঙ্খলা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। এরপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিকে। তাঁর গৃহীত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়ে উঠে সবুজ আর ফুলের নগরীতে। এখন দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে রাজশাহী।
রাজশাহীর যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। রেলক্রসিংয়ে নির্মিত হয়েছে ফ্লাইওভার।
নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ১২ কি.মি. ফোরলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বাইসাইকেল লেনসহ আধুনিক চারলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত আলুপট্টি হতে তালাইমারী পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক। নগর ভবন থেকে রাণীবাজার, মণিচত্বর থেকে সদর হসপিটাল মোড় পর্যন্ত অনেক রাস্তা নাগরিকদের সুবিধার্থে প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সড়কের পাশে প্রশস্ত ড্রেন, ফুটপাত এবং সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অঙ্কের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী পরিণত হচ্ছে মডেল মহানগরীতে। সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৬ লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। চলছে ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চার লেন সড়কের নির্মাণ।
থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করতেও তিনি গ্রহণ করেন যথাযথ উদ্যোগ। সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, মহানগরীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর আওতায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উদ্যোগী সংস্থার অর্থায়নে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সোনাদীঘি ১৬ তলা ‘সিটি সেন্টার’ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। আটতলা ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’ অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে ও আটতলা ‘দারুচিনি প্লাজা’ নির্মাণ কাজ চলছে।
পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির আদলে রাজশাহীতে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন নগরপিতা। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বহুল কাক্সিক্ষত বিকেএসপি। বিকেএসপির জন্য পবা উপজেলার খিরসন মৌজার অভয়ের মোড় এলাকায় প্রায় ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হবে।
২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পূরণ হয় লিটনের অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। রাজশাহী এখন আলো-ঝলমলে শহর। প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর ১৫টি মোড়ে বসানো সুুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইট পোল, যা নগরীকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও এই সিটির অর্জন কম নয়। ইপিআই কার্যক্রমে টানা ১০ বার জাতীয়ভাবে দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশলী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষায়িত ও নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন নগরপিতা।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগরীর একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ‘নভোথিয়েটার’ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
রাজশাহীর প্রধানতম পর্যটন এলাকা পদ্মাপাড়। বিনোদনের অন্যতম এ এলাকাটি আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে পদ্মাপাড়কে ঘিরে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ মখদুম (রহ) মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটালাইজ্ড করা হয়েছে। নগর ভবনে স্থাপন করা কন্ট্রোল এন্ড কমান্ড সেন্টার থেকে নগরীকে মনিটরিং করা হয়। নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নগরীকে চারটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আয়তন প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।