The news is by your side.

রামু সহিংসতার ১০ বছর আজ: ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রকৃত নাশকতাকারীরা!

প্রকৃত অপরাধীরা আসামী না হওয়ায়,স্বাক্ষ দিতে নারাজ স্বাক্ষীরা

0 201

 

 

কক্সবাজার অফিস

১০ বছর পেরিয়ে ১১ তে পা দিল কক্সবাজারের রামুর ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পল্লীতে ভয়াল সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা।  সভ্যতার ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন ছিল কক্সবাজারের রামু উপজেলার সব সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে। কিন্তু ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে এক বিভীষিকাময় ঘটনার মাধ্যমে তা কিছুটা রূপ পাল্টায়।

মানুষএখন ভুলতে বসেছে এ ভয়াল ঘটনা। সে রাতে রামুর ঐতিহ্যবাহী ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লীতে একযোগে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তের দল। পরের দিন একই ঘটনার জের ধরে উখিয়া এবং টেকনাফেও আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অনাকাঙ্ক্ষিত এমন সাম্প্রদায়িক হামলার দিবস উপলক্ষে আজ উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এখনো নিষ্পত্তি হয়নি ১৯টি মামলার। স্বাক্ষী দিতে নারাজ মামলার স্বাক্ষীরা।  মুলত প্রকৃত নাশকতাকারী এবং হামলাকারীদের প্রকৃতভাবে আসামী না করে নির্দোষ কিছু মানুষকে আসামী করার কারনে মুলত ওই মামলাগুলোর স্বাক্ষী নিতে নারাজ। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। অভিযোগপত্রসমূহে আসামির সংখ্যা ৯৮৪ জন।

পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কয়েকটি মামলা পুনঃতদন্ত করে আরো ৩৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। মোট মামলার সংখ্যা ১৯টি। এর মধ্যে রামু থানায় দায়ের করা কেবল একটির আপস সূত্রে বিচার কাজ শেষ হওয়ায় মামলাটির চার্জশিটভুক্ত ৩৮ জন আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। অবশিষ্ট ১৮টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা জৈতবন বৌদ্ধ বিহার অগ্নিসংযোগ মামলার স্বাক্ষী পুর্নধন বড়ুয়া ভিশন নিউজ ২৪ কে বলেন,২০১২ সালের এই  ভয়াল হামলার পর আমরা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম সেই সুবাধে আমাদের মামলার স্বাক্ষী হিসাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর পার হলেও আদালতের পক্ষ থেকে আমাদের মামলার স্বাক্ষ গ্রহনের জন্য এখনও পর্যন্ত কোন নোটিশ বা যোগাযোগ করা হয়নি।

অপরদিকে একই মন্দির হামলার অভিযোগে এজাহার ভুক্ত আসামী নুরুল ইসলাম(ছদ্মনাম) তিনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভিশন নিউজ ২৪ কে বলেন, আমাকে বিনাদোষে উদেশ্যপ্রনোদিত ভাবে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ৩১৪ নং মামলার আসামী করা হয়।  ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘ ১০ টি বছর মামলা চালিয়ে আসতেছি,যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর,উক্ত মামলায় আমরা প্রায় ৭৫ জন আসামী রয়েছি,মামলা মাঝেমধ্যে কোর্ট পরিবর্তন হয়,কিন্তু কোন স্বাক্ষী এখনো পর্যন্ত আদালতে হাজির হয়নি। যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। আমরা চাই দ্রুত এই মামলা নিষ্পত্তি হউক।

দীর্ঘ ১০ বছরেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা এখন এক প্রকার ভুলতে বসেছেন সেই ভয়াল হামলার ঘটনার কথাও।

রামুতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বৌদ্ধ পল্লীর এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিচার কত চাইব? ঘটনার দীর্ঘদিনের কারণে এসব ভুলে গিয়েছি। কেবল বছরপূর্তির দিনটিতেই একটুখানি মনে পড়ে। আমাদের মধ্যে পুর্বের সেই মেলবন্ধন আবারও ফিরে এসেছে। তবে আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা যেন শাস্তির আওতায় আসে। তিনি বলেন,এলাকায় মুসলিম, হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই একসঙ্গে বসবাস করে আসছি। কারো সঙ্গে কোনো বিভেদ নেই। ২০১২ সালের সেই ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের অনাকাক্সিক্ষত যে ঘটনায় বৌদ্ধ বিহার ও পল্লী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সেই ক্ষত কিছুতেই পোষাবারও নয়।

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, এই মামলগুলোর  সার্চশীটে ৯৮৪ জন আসামি এবং ১৬০ জন স্বাক্ষী রয়েছে। আজকে প্রায় ১০ টি বছর গড়িয়ে গেলো এই মামলার।কিন্তু আমরা এখনো স্বাক্ষ্য গ্রহনের কাজ শুরু করতে পারিনি। স্বাক্ষীদেরকে বারেবারে সময় দেওয়া হয়েছে,মোবাইল ফোনে কথা হযেছে,সরাসরি গিয়েও কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ স্বাক্ষী দিতে উৎসাহী নয়।তিনি আরো বলেন, অন্তত একজন স্বাক্ষী ও যদি স্বাক্ষী দেয় তাহলে আমরা বিচার প্রক্রিয়া চালাব। আসলে এমন একটি অপরাধের বিচার হবে না সেটি কখনো মেনে নেওয়ার নয়।

রামু সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির একটি সুত্র জানান, আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সম্পদ পুড়িয়েও যখন আমরা বিচার পাইনি তখন আর বিচার দাবি করছি না। এখন যে রকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে সেটাই অব্যাহত থাকুক অনাদিকাল পর্যন্ত।

অপরদিকে প্রশাসন বলছে,ওই ঘটনার পর দীর্ঘ ১০ বছরে রামু উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে, রামু থানা পুলিশ, ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন, এপিবিএন ও রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রয়েছে। এতে করে রামুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় সতর্ক নজর রয়েছে প্রশাসনের। উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে। আশাকরি রামুতে এরকম ঘটনা আর পুর্নাবৃত্তি হবে না।

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেরাংঘাটা গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার পুত্র উত্তম কুমার বড়ুয়া (২৮) নামের এক যুবকের ফেসবুকের একটি কথিত ছবি নিয়েই ঘটেছিল দেশের কলঙ্কিত এতবড় ঘটনাটি।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২:৩০ মিনিটে রামুর ফকিরা বাজারের ফারুক কম্পিউটার টেলিকমের মালিক ফারুক এবং স্থানীয় শিবিরকর্মী মুক্তাদির বসে উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি ছবি বের করে। সেই ছবির কথা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ মিছিল বের হয় এবং পরবর্তীতে রামু বৌদ্ধপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ঘটনা ঘটে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.