The news is by your side.

রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমেছে, তা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ

রিজার্ভ নিয়ে উভয় সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক

0 222

 

 

আমদানি দায় পরিশোধে সহায়তার জন্য প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুই বছরের বেশি সময় পর ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। রিজার্ভ কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করছে। কারণ, বিক্রি না করলে ডলারের দর আরও বাড়বে। এতে মূল্যস্ম্ফীতির চাপ অনেক বেড়ে যাবে। আবার রিজার্ভ এভাবে কমতে থাকলে আপৎকালীন সুরক্ষার জায়গা দুর্বল হবে। এমন বাস্তবতায় উভয় সংকটে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চাহিদা যাই হোক, কোন ক্ষেত্রে কেমন দরে ডলার বেচাকেনা হবে- তার ওপর বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। ফলে কৃত্রিমভাবে দর ধরে রাখার কোনো চেষ্টা আর কাজে আসছে না। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার পরও অল্প সময়ের ব্যবধানে দর অনেক বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আমদানির জন্য প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা।  আগস্টে তা ১১২ টাকায় ওঠে। রপ্তানিকারকদের ১০৮ টাকা ও রেমিট্যান্সের বিপরীতে ১১৪ টাকা পর্যন্ত দর উঠে যায়। এখন অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় প্রতি ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো।

সাধারণভাবে একটি দেশে ছয় মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাকে নিরাপদ মনে করা হয়। গত অর্থবছর আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৮২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। প্রতি মাসে গড়ে ৬৮৭ কোটি ডলার ব্যয় ধরলে বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের সামান্য বেশি আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব প্রকাশ করে, তাতে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থও রিজার্ভ হিসেবে দেখানো হয়। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখানো রিজার্ভ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। সে বিবেচনায় বর্তমানের রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা দিয়ে চার মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমেছে, তা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। একটা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিক্রি থামাতে হবে। আগামী ছয় মাস বা এক বছরে পরিস্থিতি একেবারে ঠিক হয়ে যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। ফলে ডলার বিক্রি বন্ধ করলে সংকট বাড়বে- এমন মনে করা ঠিক হবে না। চাহিদা ও জোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলারের বাজারভিত্তিক দর দিলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়বে। আবার রপ্তানিকারকরাও দ্রুত অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন শুধু রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এতে এসব ব্যাংক ৯৬ টাকায় ডলার কেনার সুযোগের ফলে হয়তো সরকারের গম ও সার আমদানিতে এক ধরনের প্রণোদনা হিসেবে কাজ করছে। তবে বিক্রি না করলে এসব ব্যাংক বাজার থেকে কিনবে। কেননা অন্য ব্যাংকগুলো কোনো না কোনোভাবে তো চলছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার সামলাতে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত না করে ব্যাংকগুলোর ওপর নানা উপায়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে বাজারে স্বাভাবিকতা ফেরাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর প্রধান কারণ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় আরও ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এখন রিজার্ভ ধরে রাখতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় কমাতে বেশ কিছু পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণ, কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণ বন্ধ, ১০ লাখ ডলারের বেশি আমদানির তথ্য যাচাইসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা দরে বিক্রি করেছিল। এখন বিক্রি করছে ৯৬ টাকায়। এর মানে ৯ মাসের কম সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ডলারের দর বাড়িয়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ১২ শতাংশ। আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে বেড়েছে অনেক বেশি। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারে ৯৯ টাকা, রেমিট্যান্সে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দর ঠিক করেছে ব্যাংকগুলো। আর একটি ব্যাংকের এ দুয়ের গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি ও আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে পারবে। এতে আমদানিতে ১১২ টাকায় উঠে যাওয়া ডলারের দর ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর ডলারের বেচাকেনার দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে অনেক ক্ষেত্রে ডলার লেনদেন হচ্ছে। গতকাল বুধবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০১ টাকা ৩৯ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা হয়।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.