বিসিসি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র কাঁধে সাবেক দুই মেয়রের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল
বরিশাল সিটির সড়ক বাতি ও পানির লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
জহির রায়হান, বরিশাল
বরিশাল সিটি করপোরেশনে গত ১০ বছরে বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৫৭ কোটি ১৯ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৯ টাকা ৷ এর মধ্যে ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪ টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলই সিটির সাবেক দুই মেয়রের মেয়াদকালের। আর বর্তমান মেয়রের মেয়াদকালে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ১৫ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা ।
সব বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ভার বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাঁধে পড়েছে। এসব বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না হওয়ায় বরিশাল সিটির সড়ক বাতি ও পানির লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী ( ওজোপাডিকো ) বরিশাল।
অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ডের অলিগলি আর পানি লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী ৷
কোন নোটিশ ছাড়াই সড়ক বাতি ও পানির লাইনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে দাবি সিটি করপোরেশনের।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত তৎকালীন মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের মেয়াদকালে বিদ্যুতের মোট বকেয়া ছিলো ২০ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকা। কিন্তু তখন এক টাকাও পরিশোধ করেনি তাঁর পরিষদ ।
২০১৮ সালে অক্টোবর পর্যন্ত তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আহসান হাবীব কামালের মেয়াদে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয় ২১ লাখ ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৯ টাকা। সাবেক এই দুই মেয়রের মেয়াদে মোট বকেয়া হয় ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪ টাকা।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ১২২ টাকা পরিশোধ করে আহসান হাবীব কামালের পরিষদ।
বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মেয়াদকালে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বকেয়ার অংক দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ টাকা। তবে বর্তমান পরিষদ ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ২০৭ টাকার বকেয়া বিল পরিশোধ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ ১-২ অধীনের নগরীর ১৫ সড়কের সড়ক বাতি এবং ১১ টি পানি উত্তোলনের মোটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পলাশপুর সড়ক, বানিজ্যিক এলাকা বাজার রোড ও পোর্ট রোড, আবাসিক এলাকা কলেজ রো, কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড, নতুন বাজার পুলিশ ফাড়ির সামনের সড়ক, নথুল্লাবাদ লুৎফুর রহমান সড়ক এবং উত্তর আমানতগঞ্জ সড়ক।
এছাড়াও কালিজিরা সড়ক, জিয়া সড়ক, ধানগবেষনা সড়ক, টিয়াখালী সড়ক, কালুশাহ সড়ক, নবগ্রাম সড়ক ও বটতলা। এসব সড়কের ৩০টি এলাকার শাখা সড়কেরও বিদ্যুৎ বাতি জ্বলছে না। ফলে এসব এলাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বাসিন্দারা।
আবু ত্বহা নামে এক বাসিন্দা জানান, আমরা তো নিয়মিত ট্যাক্স দিয়ে আসছি ৷ অথচ মেয়ররা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না ৷ এখন রাতের অন্ধকারের ভোগান্তিতে নগরবাসী।
ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ -২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফারুক হোসেন জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাছে ওজোপাডিকোর ৫৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এতে আমাদের ওপর মন্ত্রণালয় থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
তাই আমরা বাধ্য হয়েই রোববার বিকেল থেকে সড়ক বাতি ও পানির লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযানে নামি। বয়েকা আদায় না পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই নিবার্হী প্রকৌশলী।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক বলেন, হঠাৎ বরিশাল সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতির ও পানির লাইনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ওজোপাডিকো ৷ এখন তো নগরবাসী মনে করবে বর্তমান মেয়র বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন না বলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু সাবেক দুই মেয়রের মেয়াদকালে ৪২ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে গেছে তা তো কেউ বুঝবে না । এখন সেই বকেয়া বিল পরিশোধ করবো না নগরীর উন্নয়ন করবো? সিটি করপোরেশনে যে আয়, তা দিয়ে এই বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা সম্ভব না।