মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া
১৫ আগস্ট ১৯৭৫। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার মাত্র এক সপ্তাহ পরে ২৩ আগস্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ , এ এইচ কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ ২৩ আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ। আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মানাধীন ভবনের পাশাপাশি তিনটি কক্ষে রাখা হয়। প্রথম কক্ষে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ। দ্বিতীয় কক্ষে ছিলেন কামারুজ্জামান ভাই। আমিও দ্বিতীয় কক্ষে ছিলাম। আর তৃতীয় কক্ষে ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।
৩ নভেম্বর ১৯৭৫। গভীর রাতে জেলখানায় পাগলা ঘন্টা বাজে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জাতীয় চার নেতাকে এক নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।হঠাৎ বুটের আওয়াজ। পরক্ষনেই গুলির শব্দ। ব্রাশফায়ার করে সেনাসদস্যরা দ্রুত চলে যায়।
কিছুক্ষন পরে পাশের কক্ষে গোঙানির আওয়াজ। পানি….পানি…. সুবেদার গোঙানির শব্দ শুনে জেল গেটে খবর দেয়। ১৫ মিনিটের মধ্যে ফের বুটের আওয়াজ। এক নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে বেয়নেট চার্জ করে সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ওরা চলে যায়৷ আমরা সকলে খাটের নিচে শুয়ে আতংকে সময় পার করি। ভোর হয়। সকাল, সকাল গড়িয়ে দুপুর। নেতৃবৃন্দের লাশও আমাদের দেখতে দেয় নি। সেই রাতের কথা মনে হলে আজও ভয়ে কেঁপে উঠি। মনে হয় কেয়ামতের রাত।