আজ ১৭ নভেম্বর। কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন। ৭০ পেরিয়ে এদিন ৭১ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। বহু জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশ জুড়ে সুরের সুরভী ছড়িয়েছেন এই সংগীত ব্যক্তিত্ব। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলার ভাষাভাষীদের কাছে রুনা লায়লা এক গৌরবের নাম।
বাংলা, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, ফারসি, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান করেছেন দমাদম মাস্ত কালান্দার খ্যাত এই গুণী তারকা শিল্পী। কুড়িয়েছেন উপমহাদেশের কোটি মানুষের ভালোবাসা।
উপহার দিয়েছেন আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, একা একা কেন ভালো লাগে না, ইস্টিশনে রেলগাড়িটা, সাধের লাউ, খাঁচার ভিতর অচিন পাখিসহ অসাধারণ, জনপ্রিয় শতাধিক বাংলা গান।
বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় গান গেয়ে বিশ্ব মাতিয়ে রাখা একমাত্র বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে যিনি মাতিয়ে রেখেছেন সংগীতপিপাসুদের।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। রুনা লায়লার যখন আড়াই বছর বয়স, তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে পাকিস্তানের মুলতানে যান। সেই সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।
ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে গান গাইতেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ চলচ্চিত্রে গান করার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক শুরু। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন। লোকজ, পপ, রক, গজলসহ প্রায় সব ধাঁচের গানই গেয়েছেন তিনি।
মাত্র সাড়ে ১২ বছর বয়সে জুগনুতে প্লেব্যাক করেন। পুরো এক মাস চর্চা করেন। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন মনজুর হোসেন, যিনি তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ওই ছবিতেই প্রথম তার গান গাওয়া। দ্বিতীয় গানটিও একই ছবির।
রুনা লায়লার সংগীতশিল্পী নয়, হওয়ার কথা ছিল নৃত্যশিল্পী। টানা চার বছর করাচির বুলবুল ললিতকলা একাডেমির ভরতনাট্যম, কত্থক, কত্থকলি শেখেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত গানের মাঝেই থেকে যান।
নন্দিত এই শিল্পী অভিনয় করেছেন ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রেও। দীর্ঘ সংগীতজীবনে ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কারে। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার। এ ছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
নব্বইয়ের দশকে গিনেস বুকে স্থান পান এই শিল্পী। রুনা লায়লা বলেন, জন্মদিন অবশ্যই বিশেষ। এ দিনটিতে আমার ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী ও সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা পেয়ে থাকি। মানুষের ভালোবাসাই আমার এ পর্যন্ত চলার পথের শক্তি। এ ভালোবাসাটা আমৃত্যু পেতে চাই।