৫৯ বছর পর চালু হলো মুর্শিদাবাদ-রাজশাহী নৌপথ
ভারত- বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল
৫৯ বছর পর আবারও ভারতের মুর্শিদাবাদের সঙ্গে নৌপথের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলো রাজশাহীর। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডাব্লিউ টিঅ্যান্ডটি) ১৯৭২ এবং সংশোধনী ২০১৬/২০২০ এর আওতায় ১৯৬৫ সালের পর সোমবার ভারত ও বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীরা যৌথভাবে এই নৌপথ উদ্বোধন করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের মায়াবন্দরে উপস্থিত ছিলেন জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের বাণিজ্য সচিব মোহাম্মদ আরিফ। অন্যদিকে বাংলাদেশের গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা।
১৯৬৫ সালের আগে ভারতের মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির মায়াবন্দর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহীর গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে পণ্য পরিবহন করা হতো। কিন্তু সে বছর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের কারণে অন্যান্য স্থানের মতো এই রুটটিও বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার এই রুটের পরীক্ষামূলক উদ্বোধনী যাত্রায় মুর্শিদাবাদের মায়া নদীবন্দর থেকে সোমবার পাথরের একটি পরীক্ষামূলক চালান রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। উল্টো দিক থেকে জুটের একটি চালান মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে পাঠানো হয়। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে আরও গতি আসবে বলে আশাবাদী বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ-১ এর আওতায় ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশের সাথে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী বন্দরের সূচনা হলো। এই রুট ফের সচল হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অনেক। বাংলাদেশের সহযোগিতায় ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ-২ এর আওতায় ভারতের আসামে থেকে কলকাতা নদী বন্দরের মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, মাত্র কিছুদিন আগেই পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্রুজ শিপ গঙ্গা বিলাসের সফল ট্রায়াল চালিয়েছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তাতে ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়ে ১ এবং ২ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বাংলাদেশের ভূমিকাও অনেক। আজ আমরা একটা পাথরের চালান দিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রার সূচনা করলাম। এই নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে আশেপাশ ব্যাপক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সবাই উপকৃত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের বাণিজ্য সচিব মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই রুট পুনরায় চালু হওয়ায় দুই দেশই উপকৃত হবে। পরীক্ষামূলক যাত্রায় আমরা দেখতে চাইছি কার্গো শিপিং, লোডিং আনলোডিং সব ক্ষেত্রে ঠিক কত সময় এবং খরচ লাগতে পারে।’ তার দাবি- স্বল্প নাব্যতার মধ্য দিয়েও এই রুটে সারাবছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চালাতে অসুবিধা হবে না।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকলটি ১৯৭২ সাল থেকে চালু রয়েছে। ২০১৬ এবং ২০২০ সালে পিআইডাব্লিউ টিঅ্যান্ডটির প্রথম এবং দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে চুক্তির ৫ ও ৬ নম্বর রুটটি বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে আরিচা এবং মায়া থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এর ফলে ভারতীয় অংশে মায়া ও ধুলিয়ানকে এবং বাংলাদেশের অংশে রাজশাহী ও গোদাগাড়ি বা সুলতানগঞ্জকে নতুনভাবে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৌপথে ধুলিয়ান-মায়া ৪১ কিলোমিটার। মায়া-গোদাবাড়ি বা সুলতানগঞ্জ ২০ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহী ৩৬ কিলোমিটার। রাজশাহী থেকে আরিচার দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে নৌপথে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো প্রটোকল রুটটি চালু সম্ভব হলে ব্যাপকভাবে এর ব্যবসায়িক উপযোগিতা পাবে দুই দেশ।