রোববার গভীর রাত থেকে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল পাকিস্তান। লক্ষ্য ছিল কারাগারে থাকা ইমরান খানকে বাধা দেওয়া। কিন্তু তাঁকে ঠেকানো যায়নি। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েছেন। ইমরান খানের দল পিটিআই অনলাইনে সমাবেশ করেছে। দলীয় সমর্থকরা ইউটিউব বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেখানে যোগ দেয়। প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ছিল ভার্চুয়াল এ সমাবেশে। ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের এ কর্মসূচিতে দলের নেতারা অনলাইনেই ভাষণ দেন।
এ কর্মসূচিতে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল ইমরান খানের বক্তৃতা। কারাগার থেকে তাঁর সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। জানা যায়, তিনি তাঁর দলের কর্মীদের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছিলেন, সেটিই এআইয়ের মাধ্যমে তাঁর কণ্ঠ নকল করে ইমরান খানের বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা হয়। আমরা এর আগে একই ধরনের ঘটনা দেখেছি। যেমন গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও এআই ব্যবহার করেছেন। ইমরান খানের পক্ষ থেকে এআই ব্যবহার অবশ্য রসিকতা বা মজার ছলে করা হয়নি। এটি করা হয়েছে সরকারের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। ইমরান খান এখন পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এক চরিত্র; কারাগারে অন্তরীণ। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস থেকে শুরু করে জালিয়াতিসহ বিচিত্র অভিযোগে দেড় শতাধিক মামলা রয়েছে। সে জন্য ইমরান খানকে সরাসরি শোনা অসম্ভব। এ কারণেই তাঁর দল বিকল্প হিসেবে এআই বেছে নিয়েছে।
প্রযুক্তির ব্যবহারে তারা সিদ্ধহস্ত। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পিটিআই সফলভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পেরেছিল। তরুণ পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দলটি কাজে লাগিয়েছিল ইউটিউব ও মোবাইল অ্যাপ। স্বাভাবিকভাবেই তার পরবর্তী ধাপ ছিল এআই। ভবিষ্যতে এর ব্যবহারের প্রবণতা আরও বাড়বে। বেশির ভাগ দেশেই রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টকে জেল দেওয়া হয়। তারা কারাগারে থাকলেও এআই প্রযুক্তি তাদের সরাসরি কর্মসূচিতে বা অনলাইন সমাবেশে হাজির করতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। মূল্যস্ফীতি ৪৩ শতাংশের ওপরে এবং এটি ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ অবস্থার জন্য অবশ্য ইমরান খানের সরকারও দায়ী। তবে ভোটারদের স্মৃতিশক্তি এত প্রখর নয়। তাই এখন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে নওয়াজ শরিফদের বিরুদ্ধে। এর অর্থ, ইমরান খান কি জয়ী হতে পারবেন? না, ব্যক্তিগতভাবে হয়তো তিনি পারবেন না। কারণ তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না; আদালতের মাধ্যমে তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তাঁকে আবার অভিযুক্ত করা হয়। এবারের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস। ফলে ইমরান খান হয়তো শিগগিরই ছাড়া পাবেন না। তবে তাঁর সমর্থকরা অপ্রত্যাশিত কিছু করতে পারে। এর প্রমাণ আমরা এ বছরের মে মাসে দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ ইমরান খানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। এমনকি তারা সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরেও হামলা চালায়। তাই ইমরান খানের ভোটারদের অবমূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। তবে এটাও বড় প্রশ্ন– নির্বাচন কি অবাধ ও সুষ্ঠু হবে?
পাকিস্তানের বাস্তবতা আমরা জানি। সেখানকার নির্বাচনে সেনাবাহিনী কলকাঠি নাড়ে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবারের নির্বাচন পশ্চিমা দেশগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো সংস্থাগুলোও বসে নেই। কারচুপির নির্বাচন হলে পাকিস্তানের দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাহলে সেনাবাহিনী কী করবে? সেখানে কি কারচুপির নির্বাচন এবং এর পরিণতিতে সংকটের ঝুঁকি আছে? এটা কি শরিফদের জয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করবে? নাকি আবারও ভোট পেছানো হবে? এখানে ভালো কোনো বিকল্প নেই। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার পরিচিত বিলম্বের পথই গ্রহণ করতে পারে।