The news is by your side.

২ বছরে ব্যাংকের ইসলামিক শাখা বেড়েছে ১০ গুণ

0 183

 

 

চলতি আগস্টে ৪৯১টি শাখা ও ৯৩টি উপশাখায় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। কিছুদিনের মধ্যে সরকারি বেসিক ব্যাংক ও ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করবে। আরও বেশ কিছু ব্যাংক ইসলামি ধারায় ফিরতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর ইসলামি উইন্ডো ছিল ৪১টি। গত বছরের জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৫টিতে। চলতি জুন শেষে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪৮০টিতে।

ব্যাংক খাতের আমানত, ঋণ ও রেমিট্যান্স আহরণেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর হিস্যা বাড়ছে। সোমবার (২৯ আগস্ট) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা-কেন্দ্র বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুরোপুরি ইসলামি ব্যাংকিং করা ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ১০ শতাংশ। সেখানে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি উইন্ডোগুলোতে বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি।

একইভাবে পুরোপুরি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। প্রচলিত ব্যাংকের বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, দুই কারণে ইসলামি ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রথমত, প্রচলিত ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সুদের চেয়ে বেশি লাভ দিতে পারে না, কিন্তু ইসলামি ব্যাংকগুলো চাইলে বেশি লাভ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত— ধর্মীয় কারণে মানুষ ইসলামি ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে।

তিনি আরও বলেন, কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর যারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না তারা ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দিকে যাচ্ছে। অনেক গ্রাহক সরকারি ব্যাংকেও ইসলামি ব্যাংকিং চান। সে কারণে আমরাও ইসলামি ব্যাংকিং-এর দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ২৭.৭৮ শতাংশ দিয়েছে ইসলামি ব্যাংকগুলো। তিন মাস পর অর্থাৎ গত জুনে এই হার বেড়ে হয়েছে ২৮.৫২ শতাংশ।

একইভাবে গত মার্চ শেষে মোট রেমিট্যান্সের ৩০.৯৬ শতাংশ এনেছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। জুনে ইসলামি ব্যাংকগুলোর ওই হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী মার্চে মোট শাখার মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর শাখার হিস্যা ১৯.৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ১৩ শতাংশ।‌

এদিকে দেশের ব্যাংক খাতের অনেক কিছুরই শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ ও প্রবাসী আয়ও আসে ব্যাংকটির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার শাখা-উপশাখায় ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালিত হচ্ছে। গত জুন পর্যন্ত পুরোপুরি ইসলামি ধারায় ব্যাংকিং করছে ১০টি। এগুলো হলো—  ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক।

যেসব কনভেনশনাল ব্যাংকের এখন ইসলামি শাখা রয়েছে— সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ ও এনআরবি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে ইসলামী ব্যাংকিং-এর সরাসরি শাখা বেড়েছে ৭৬৯টি। দেশে গত বছরের জুন পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ছিল ১৪৪৮টি। চলতি জুন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৯৬৩টি ব্যাংক শাখার মধ্যে ২ হাজার ২০৭টি শাখাই ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর।

 

সাধারণ ব্যাংকের ইসলামিক শাখা

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংককে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারায় ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’।

এ ছাড়া সাধারণ ব্যাংকিং করা যমুনা ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পেয়েছে।

যমুনা ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামি ধারার কার্যক্রম শুরু করলে দেশে ইসলামি ধারার ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১টিতে। এছাড়া আরও ১০টিরও বেশি ব্যাংকের আবেদনপত্র জমা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত ও বিনিয়োগের দিক থেকে এক-চতুর্থাংশই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দখলে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেখা যাচ্ছে, প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো ব্যবসায় ভালো করছে। মানুষও এখন শরিয়াহভিত্তিক অর্থব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে।

ইসলামি ব্যাংকিংয়ের শুরু

ইসলামি ধারার ব্যাংকিং চালু হয় ১৯৬৩ সালে। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। দেশি-বিদেশি উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশে এর যাত্রা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশই ইসলামি ব্যাংকগুলো পেয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের আমানতে ইসলামি ব্যাংকগুলোর হিস্যা ছিল ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অংশ ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.