২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিল বিশ্বব্যাংক
গত অক্টোবরেও একই পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮ শতাংশ। গত অক্টোবরেও একই পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজ কার্যালয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রণজিৎ ঘোষ। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫.৭ শতাংশ হতে পরে। যদিও গত অক্টোবরে এটা ৫.৮ হওয়ার আভাস দিয়েছিল ব্যাংকটি।
তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরো বেড়ে ৫.৯ শতাংশ হতে পারে। যথাযথ সংস্কার পদক্ষেপ না নিলে অর্থনৈতিক দুর্বলতা আরো প্রকট হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি, ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। তবে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বলছে সংস্থাটি।
এর মধ্যে জ্বালানির মূল্য সমন্বয়, রপ্তানি ভর্তুকি কমানো এবং মুদ্রানীতি আরো কঠোর করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি জোরালো অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেশের অর্থনীতির সংস্কার খুব জরুরি। পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার একক বিনিময় হার চালু হলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরো শক্তিশালী হবে।
একক বিনিময় হারে মুদ্রাস্ফীতিও আরো কমবে।
তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, যার ফলে বিনিয়োগে তারল্য সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধি-নিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের ফলে খরচ বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো কমেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সংস্কার জরুরি। তবে ব্যাংক মার্জারের (একীভূতকরণ) ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছর দেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, ফলে বিনিয়োগের দরজা কিছুটা সংকুচিত। খেলাপি ঋণ এখনো অনেক বেশি। রিপোর্টিং মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং সেক্টরের পরিস্থিতি আরো চাপে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, বিনিময়হারের নমনীয়তা তৈরি হলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। কাঠামোগত সংস্কারগুলো অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে চাবিকাঠি হবে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাংশ। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ৬.১ শতাংশ হবে। ভারত ও বাংলাদেশ এতে মূল ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।