নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনতে চান না দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে দলের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ থেকে পাঁচ-সাতজন নেতা বাদ পড়তে পারেন। সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতার পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদগুলোতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। কোষাধ্যক্ষ পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে এক-দুজন বাদ পড়তে পারেন। একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান কমিটির একজন উপসম্পাদককে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে। সভাপতিমণ্ডলীতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। দু-একটি পদে পরিবর্তন আসতে পারে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দেওয়া খুব সহজ হবে না বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত রাখা কঠিন হবে। ফলে অভিজ্ঞ নেতাদের ওপরই ভরসা রাখতে চান সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলের একাংশের নেতাকর্মী মনে করছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদলের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। তাঁদের যুক্তি, বেশিরভাগ জেলা সম্মেলনে পুরোনোরাই শীর্ষ নেতৃত্বে রয়ে গেছেন। কেন্দ্রেও এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকছেন। অর্থাৎ এই পদে তিনি হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন। আর আগামী বছরের এপ্রিলের দিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওবায়দুল কাদেরের। ওই সম্ভাবনা তৈরি হলে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ শূন্য হয়ে যাবে। তখন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কোনো পদ নেই।
তবে চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে যাঁর নাম প্রথমে থাকে, তিনিই সিনিয়র হিসেবে পরিচিতি পান। আর তাঁকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি কখনোই সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করিনি। তবে আবারও আমার ওপর দায়িত্ব এলে আমি সেটাকে আওয়ামী লীগের পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য করে দায়িত্ব পালন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংগঠনিক তৎপরতার দিক থেকে বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদ বেশ সফল। কেন্দ্রীয় নেতাদের পারফরম্যান্স বেশ ভালো। এই অবস্থায় কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া হবে, সেটা বাছাই করা বেশ মুশকিল। তবে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে নতুন মুখ আসবে।’
বঙ্গবন্ধু পরিবারই আগ্রহের কেন্দ্রে :আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের চার সদস্য- শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা হোসেন পুতুল ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসুক। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁদের কেউই এই মূহূর্তে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে আসতে চাচ্ছেন না।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সায়মা হোসেন পুতুল ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে নেই।
সম্পাদকীয় এবং সদস্য পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম গত মেয়াদের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। দুজনকেই আবার পদে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে সম্পাদকমন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগের মধ্যে কেউ কেউ সম্পাদকমন্ডলী এবং সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।