জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি করে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে ভারত অন্ধকারের তলানির দিকে চলে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন দেশটির রিজার্ভ ব্যাংকের(আরবিআই) সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। এর আগে নিজের নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতি না মেলায় নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজন। তখন সরকারের নোট বাতিল অর্থাৎ ডিমনিটাইজেশনেরও তীক্ষ্ণ সমালোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। নিজের সর্বশেষ সমালোচনায় এবার তিনি ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভাজনবাদী‘ সরকারের কুপ্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশবাসীকে।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের একটি ভাষণে রঘুরাম রাজন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসলে দেশের উন্নতি সাধন করে, বরং তারা একে দুর্বল করে দেয়। কারণ, তারা তাদের শর্তে দেশ চালাতে চায়। ভারতে, যেমন হিন্দুত্ববাদকে সর্বজনীন ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
মোদি সরকারের সমালোচনায় রাজন সরাসরি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ এবং ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ’ ভারতের জাতীয় সুরক্ষা জোরদার করতে সহায়তা করে না।
আরবিআইয়ের সাবেক এই গভর্নর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাতীয়তাবাদ আসলে স্বতন্ত্রভাবে বিভাজন সৃষ্টি করে।কারণ,এটি কিছুসংখ্যক নাগরিককে ‘অন্য’ হিসাবে চিহ্নিত করে দেয় এবং এই সংখ্যালঘুদের প্রকৃত নাগরিক হিসাবে গণ্য করার পক্ষে এমন সব অসম্ভব শর্ত স্থির করে যে, শেষ পর্যন্ত ওই নাগরিকরা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি আবস্থায়, আমার মনে হয় যে বিভাজনবাদী, জনবহুল বৃহতন্ত্রবাদের থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতের জাতীয় সুরক্ষার মূল কারণ হতে পারে। সুতরাং এই ধরণের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নির্বাচনে অবশ্যই কিছুটা সময়ের জন্য জয়ী হতে পারে। কিন্তু এটি ভারতকে অন্ধকারের তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে এবং একটি অনিশ্চিত পথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
তাঁর এই মন্তব্য দেশের অর্থনীতির খারাপ অবস্থা এবং অসম ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকে অবৈধ নাগরিকদের বাদ দেওয়া সংক্রান্ত এনআরসি নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই এসেছে বলে মনে করছেন দেশটির সচেতন মহল। তাছাড়া নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ইতিমধ্যে বিজেপির মধ্যেই দ্বিমত দেখা গেছে।
আরবিআইয়ের গর্ভনর পদ থেকে রঘুরাম রাজন ইস্তফা দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির শীর্ষ পদে বসেন উর্জিত প্যাটেল। ২০১৬ সালের নভেম্বরে রাতারাতি পুরনো নোট বাতিলের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন মোদি সরকার।