গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পরপর তিন মাস রপ্তানি কমেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, হাতে রপ্তানি আদেশও খুব বেশি নেই। আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যাও রয়েছে। এর মধ্যেও আকস্মিকভাবে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি হলো জানুয়ারিতে। মোট ৫৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাসটিতে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসের সর্বোচ্চ রপ্তানি। এর আগে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি ছিল ৫৩৭ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ওই রপ্তানি আয় এসেছিল। তারও আগে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড ছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। ওই মাসে ৪৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
হঠাৎ রপ্তানি আয়ে রেকর্ড একসঙ্গে অনেকগুলো পরিবর্তনের সুফল মনে করেন তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। সমকালকে তিনি বলেন, জানুয়ারি মাস ৩১ দিন হওয়ায় বেশি উৎপাদনের সুবিধা পাওয়া গেছে। নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হয়েছে ডিসেম্বর থেকে। বর্ধিত মজুরি পরিশোধের বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন কারাখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে দর নিয়ে আলোচনা করেছে। এইচঅ্যান্ডএমসহ কোনো কোনো ব্র্যান্ড ও ক্রেতা সাড়া দিয়েছে, পোশাকের মূল্য বাড়িয়েছে। সেটাও রপ্তানি আয় বাড়ার একটি কারণ। এ ছাড়া নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াও একটি অন্যতম কারণ। এসব বাজারের মধ্যে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় পণ্যের মূল্য বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া পণ্যে মূল্য সংযোজনের সুবিধা দিন দিন বাড়ছে। সেই সুবিধা আগামী প্রতিটি রপ্তানি প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অক্টোবরে রপ্তানি কমতে শুরু করে। আগের অক্টোবরের চেয়ে ওই মাসে রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ কম হয়। নভেম্বরে রপ্তানি কমে যায় ৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি কম হয় ১ শতাংশের কিছু বেশি।
ইপিবি হালনাগাদ রপ্তানি প্রতিবেদন গতকাল রোববার প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, জানুয়ারিতে গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অর্থাৎ দুই জানুয়ারির মাধ্যে তুলনামূলক বিচারে এবার রপ্তানি পরিমাণে বেশি হয়েছে ৫৯ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। রেকর্ড রপ্তানি সত্ত্বেও গত মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ কম হয়েছে রপ্তানি।
জানুয়ারিতে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, এ রপ্তানিকেও যথেষ্ট মনে করেন না তারা। তবে একেবারে খারাপও বলছেন না। কারণ চলমান বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের ব্যবসা খুব বেশি ভালো নয়। এ বছর হয়তো পরিস্থিতি এরকমই যেতে পারে। এর মধ্যে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানিতে খুব ভালো কিছু আশা করা যায় না।
জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এ সময়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল দুই হাজার ৭৪২ কোটি ডলার।
অন্যদিকে সার্বিক রপ্তানি চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের গত সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেশি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয় ওই সময়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। মোট তিন হাজার ৩২৬ কোটি ডলারের মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় এ সময়। যে পরিমাণ আগের একই সময়ে ছিল তিন হাজার ২৪৫ কোটি ডলার।