বিদেশি গৃহকর্মীরা হংকংয়ে নজিরবিহীন যৌন হয়রানি, অসদাচরণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন । চাকরি বাঁচাতে নিতান্ত বাধ্য হয়ে মালিকের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতে হচ্ছে বহু নারীকেই।
অন্তত চার লাখ নারীর সঙ্গে ঘটছে অমানবিক এ ঘটনা। শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ থেকে বাঁচতে অনেকেই দেশে ফিরে যাচ্ছে। কেউবা পালিয়ে বাঁচছেন।
সিএনএনের এক রিপোর্টে যৌন নিপীড়নের ভয়াবহ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
চীনের বিশেষ দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি হংকং। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ এই অঞ্চলটিতে ব্রিটেন ও চীনের ধারাবাহিক উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। এটা বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
মাথাপিছু সর্বোচ্চ আয়ের দেশগুলোর তালিকায় প্রায়ই শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দেখা যায় হংকংকে।
আয়-রোজগার বেশি হওয়ায় দেশটি এশিয়ার অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।
এখানে একজন বিদেশি গৃহকর্মীও তার নিজ দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি আয় করেন। কিন্তু একটু বেশি আয়ের জন্য প্রায়ই তাদের নানা ধরনের হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়।
ফিলিপাইনের নাগরিক মার্তা (ছদ্মনাম)। ২০১১ সালে উন্নত জীবনের আশায় হংকংয়ে আসেন।
দেশে একমাত্র মেয়ে এবং অসুস্থ বাবাকে যাতে সহায়তা করতে পারেন সেজন্যই হংকংয়ে পাড়ি জমান ২৯ বছর বয়সী এই নারী। তিনি জানতেন, বিদেশে গৃহকর্মীরা দেশের কর্মীদের চেয়ে অনেক বেশি বেতন পান। হংকংয়ে পৌঁছানোর আগে দেশের একটি নিয়োগকারী সংস্থা তাকে গৃহকর্মীর চাকরি খুঁজে দেয়।
এই চাকরি অনুযায়ী- নিয়োগকৃতদের গৃহকর্মী, ব্যক্তিগত শেফ, আয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতে হয়।
হংকংয়ের সব গৃহকর্মীর মতো কাজের জন্য মালিকদের বাড়িতেই তাকে বসবাস করতে হয়। মার্তার কথায়, এই ছয় মাস নিয়োগকর্তার বাড়িতে যে ধরনের শারীরিক এবং মানসিক নিপীড়নের শিকার হতে হয় তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চুক্তি লঙ্ঘন করে পালিয়ে যান মার্তা।
নিয়োগকর্তার নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার সারা শরীর তার জন্য মরে গেছে। বর্তমানে ফিলিপাইনের এই নাগরিকের বয়স ৩৭ বছর। পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এই নারী। তিনি বলেন, ‘তিনি (মালিক) আমার জীবনের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়।
মার্তা যে ধরনের নিপীড়নের বর্ণনা দিয়েছেন হংকংয়ে গৃহকর্মীদের জন্য তা অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রমী কিছু নয়। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক এই অঞ্চলের তিন লাখ ৯০ হাজারের বেশি গৃহকর্মীর বেশির ভাগেরই গল্প মার্তার মতো নির্মম। এই গৃহকর্মীদের বেশির ভাগই ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছেন।
রয়েছেন বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের নারীরাও। শহরটির মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১০ শতাংশ নারীরা হলেও পুরুষের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ।
আর এই শ্রমিকরা হংকংয়ের অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারপরও শহরটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী তারাই।