The news is by your side.

সড়ক উন্নয়নে আড়াই হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ

0 100

 

তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণিকূলের হাজারো জীব। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে পরিবেশ বিপরীতমুখী কাজে মত্ত রংপুর বন বিভাগ। গত দুই মাস ধরে তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে ক্যানেলে লাগানো গাছগুলো কাটার যেন উৎসবে মেতেছে তারা।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলার তিস্তা সেচ ক্যানেলের উন্নয়নকাজের জন্য ক্যানেলের দুই ধারে লাগানো গাছগুলো কেটে ফাঁকা করা হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আয়তন অনুযায়ী ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও তারাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৩ শতাংশের কম। তিস্তা সেচ ক্যানেলকেন্দ্রিক বনায়নের একটি বড় অংশ থাকলেও গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, ফলে ১ শতাংশের নিচে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলার দরপত্র দিয়েছে। ইতোমধ্যে গত দু’মাসে চার তৃতীয়াংশ গাছ কাটা হয়েছে।

কথা হয় ক্যানেলঘেঁষা দৌলতপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ক্যানেলের ধারে গাছ থাকায় ছেলেমেয়েরা এদিক দিয়ে শান্তিতে স্কুল-কলেজে যায়। কিন্তু এখন খাঁ খাঁ রোদ মাথায় নিয়ে স্কুল-বাড়ি যেতে হবে। আর গাছগুলোর তো বেশি বয়সও হয়নি। এগুলো না কাটলে কী এমন ক্ষতি হতো!’

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ছোট-বড় কোনো গাছই রাখা হচ্ছে না। সব কেটে সাবাড় করছে। গাছগাছালি থাকায় ক্যানেলের ধারে বিকেলে অনেকে ঘুরতে আসত। এখন তো আমাদের আশপাশের ছয়-সাত গ্রামের মানুষের তারাগঞ্জ যাতায়াতে কষ্ট হবে। গাছগুলো কাটা বন বিভাগের হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না।’

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘এত গাছ একসঙ্গে কাটা অন্যায়। যে উদ্দেশ্যে গাছগুলো কাটছে, সেটি ভালো নয়। ক্যানেল সংস্কারের নামে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার যে প্রজেক্ট নিয়েছে, তার কোনো দরকার নেই। অপ্রয়োজনে অর্থের অপচয়। এ জন্য আবার গাছগুলো কাটতে হয়েছে। গাছগুলো না কাটলে অর্থের অপচয় করতে পারত না।’

উপকারভোগী, ঠিকাদার ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ি থেকে তারাগঞ্জের মিনিটের স মিল পর্যন্ত দুই পাশে পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় ২ হাজার গাছ বিক্রি করা হয়। ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এসব গাছ দেওয়া হয়। গাছ বিক্রির ৮০ শতাংশ টাকা উপকারভোগী ও ২০ শতাংশ টাকা বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ পাবে।

গাছ কাটা ঠিকাদার দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুচদহ এলাকার মাসুদ রানা বলেন, ‘বন বিভাগ দরপত্র দিয়েছি, আমরা গাছ কিনেছি। সময় হয়েছে, তাই গাছ কাটছি। তবে গাছ না থাকলে এই ক্যানেলের পাশের সড়ক দিয়ে সত্যি যাতায়াতে খুব কষ্ট হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, গাছগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের। তবে তাপপ্রবাহের সময় গাছগুলো কাটা ঠিক হয়নি। বাকি গাছগুলো যাতে তাপপ্রবাহ পর্যন্ত কাটা না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বলব।

উপজেলা বন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান রোকন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা ভেকু দিয়ে মাটি ফেলার সময় গাছগুলো ভেঙে দিচ্ছিল। তাই বিভাগীয় অফিস থেকে দরপত্র আহ্বান করে গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে ফের গাছ লাগানো হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.