আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়নবিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এদের অতীত ইতিহাস দেখুন। এদের একটা অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বাধীনতা সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। আমি এটা নিশ্চিত করতে পেরেছি।
নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে টানা তিন বারের সরকার প্রধান বলেন, অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে আগে অনেকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ, অনেক দিক নির্দেশনা, অনেক কিছুই শুনতে হতো। আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। এটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সহায়তায় করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও মোকাবিলা করব।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
এ সময় করোনাকালে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন–ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে থাকে। আমরাই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিলাম। এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে।