ছোটপর্দার ‘ডালি’ অবসর সময়ে কী করেন? তাঁর কেরিয়ারের লক্ষ্যটাই বা কী? একান্ত আড্ডায় উঠে এল পুরনো-নতুন অনেক অজানা কথা।
ছোটপর্দা বা বড়পর্দায় তোমাকে তো খুব সুইট লাগে কিন্তু রিয়েল লাইফে তুমি ঠিক কতটা সুইট?
স্বস্তিকা: হি হি হি… এক হাঁড়ি রসগোল্লা, তার থেকে অনেকটা বেশি।
সেই রসগোল্লা কি কলকাতার?
স্বস্তিকা: এই রে… যদি কলকাতার রসগোল্লা সবচেয়ে মিষ্টি হয়, তবে কলকাতার রসগোল্লাই হবে।
টিনএজ থেকেই তো প্রায় কেরিয়ার শুরু তোমার। এত অল্প বয়স থেকেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া, এই ফেম হ্যান্ডল করা কতটা শক্ত?
স্বস্তিকা: বলতে পারো, এখনও সেভাবে ফেমটা আসেনি। এখনও আমি মানুষের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয় সেটা শিখছি। অনেক না হলেও কয়েকটা কাজ তো করেছি ইন্ডাস্ট্রিতে। আমার মনে হয়, আমাকে মানুষ খুব ভালবাসছে, কিন্তু ফেম সেভাবে আসেনি। তবে আমি কোনওদিন ‘ফেম’ শব্দটা ব্যবহার করব না, ‘ভালবাসা’ শব্দটা ব্যবহার করব। একটু একটু প্রবলেম হয় যখন মানুষ খুব বেশি ভালবাসতে শুরু করে দেয়। মাঝে মাঝে হ্যান্ডল করা একটু শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু ওই… ট্যাকলিং ইজ পার্ট অফ মাই ওয়র্ক সো আই হ্যাভ টু ট্যাকল।
কী রকম ভালবাসে মানুষ?
স্বস্তিকা: আমার সবকিছু হল মা, তার পরে বাবা। আমি খুব মিস করে ওদের সঙ্গে নিউ মার্কেটে, এসপ্ল্যানেডে শপিং করতে যাওয়াটা। লাস্ট মাসের ঘটনা, মা আমাকে বলেছিল তুই যাস না। লোক চিনবে। আমি বললাম যে চিনবে তো চিনবে, আমারও পার্সোনাল লাইফ আছে। আমি খুব স্ট্রিট হপিং করতে ভালবাসি। তো একজন হকারের কাছে আমার একটা কানের দুল খুব পছন্দ হয়েছে। দাম ছিল ৫০ টাকা। সামহাউ ওই হকার আমাকে চিনতে পারেনি, পাশে যে খাবার বিক্রি করছিল, সে চিনতে পেরেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, আরে দিদি এটা ৫০ টাকা নয়, এটা ১০০ টাকা। এই অত্যধিক ভালবাসাগুলো কখনও কখনও মেহঙ্গা পড়তা হ্যায়। আমি বলে দিলাম যে, আমাকে চেনো বলে ১০০ টাকা বললে? এখনও আমি বলব যে কলকাতার মানুষ খুব মিশুকে আর তারা কোনও সেলিব্রিটিকে যখন ভালবাসে, আই থিঙ্ক ওদের ভালবাসাটাও খুব মিষ্টিই হয়। আমার তো সেটা হ্যান্ডল করতে বেশ ভাল লাগে।
‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’, ‘অভিমান’ বা ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’-তে খুব সুন্দর চরিত্র ছিল তোমার, কিন্তু সাপোর্টিং লিড ছিল। আর টেলিভিশনে এখন তুমি প্রোটাগনিস্ট। তোমার কি মনে হয় যে, সিনেমায় সাপোর্টিং লিড করার চেয়ে টেলিভিশনে মুখ্য চরিত্রে কাজ করাটা বেশি ভাল?
স্বস্তিকা: আমার মনে হয় যে, ফিল্ম আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে সাহায্য করেছে আর ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে কীভাবে টিকিয়ে রাখতে হয়, সেটা টেলিভিশন আমাকে শেখাচ্ছে। দুটো আলাদা জগৎ। ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’ বা ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’-তে আমি সেকেন্ড লিড করেছিলাম। ‘অভিমান’-এও খুব ভাল একটা চরিত্র ছিল। কিন্তু এটা ঠিক যে, টেলিভিশন আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে যেটা আমার দরকার ছিল। আর আমার মনে হয়, দিস ইজ দ্য প্লেস… ‘ভজগোবিন্দ’ এমন একটা প্রজেক্ট, যেটা আমার কেরিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আচ্ছা তোমার পিসি, গার্গী রায়চৌধুরী তো আমাদের বাংলার খুব জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী, তুমি কি ছোটবেলা থেকে ওঁকে দেখে ইনস্পায়ার্ড হয়েছিলে?
স্বস্তিকা: বিশ্বাস করো, আমি কোনও অ্যাঙ্গল থেকে অভিনয়ে আসব বলে ভাবিনি তখন ছোটবেলায়। ও যখন বাড়ি ফিরত… এটা বললে আমার ডিরেক্টর-প্রোডিউসাররা আমাকে কী বলবে জানি না… ওর স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে আমি টিচার টিচার খেলতাম। আমি খুব পাগল টাইপের মেয়ে ছিলাম। আমার কাছে আমার পরিবার বরাবরই খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিল, এখনও তাই। এখনও আমার কিছু হলে সবার আগে বাবাকে ফোন করি, সেটা বয়ফ্রেন্ড হোক বা অন্য কিছু কারণে। আর পিসির সঙ্গে আমার এতটাই মিল যে, আমাদের দু’জনের জন্মদিনই ২৩ এপ্রিল। ইন্ডাস্ট্রি যেমন অনেক মানুষকে কাছে আনে, অনেক নতুন সম্পর্ক তৈরি করে আবার তেমনই অনেক কংক্রিট সম্পর্ককে ভেঙেও দেয়। আমি বলব না যে সম্পর্কটা এখন খারাপ। এখন হয়তো টাইম আর ডিসট্যান্সের জন্য সব সময়ে ঠিকমতো কমিউনিকেশন হতে পারে না। কিন্তু ওর মতো সুন্দরী আমি খুব কম মহিলাকে দেখেছি। যদি আমার পিসি না হতো, আর আমি যদি ছেলে হতাম, তবে ডেফিনিটলি ওকে প্রোপোজ করতাম।
এর পরে তোমার কেরিয়ার গোলস কী? ধরো পাঁচ বছর বা দশ বছর পরে?
স্বস্তিকা: প্রোডাকশন হাউস! পাঁচ বছর পরে আমি তো প্রোডাকশন হাউস খুলবই। অভিনয়টা তো প্যাশন। যতদিন আমার শরীর দেবে, যতদিন আমি মানুষকে এন্টারটেইন করতে পারব, আমি ততদিনই স্ক্রিনের সামনে থাকব। তার পরে জোর করে কোনও কিছু করব না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে গেলে একটা বেশ শক্তপোক্ত শিরদাঁড়া থাকা উচিত এবং তার জন্য আমি মনে করি, প্রোডাকশন হাউসই একমাত্র অপশন।
এবং নিশ্চয়ই টেলিভিশন প্রজেক্ট করতে চাইবে?
স্বস্তিকা: ডেফিনিটলি। এই মুহূর্তে টেলিভিশন ইজ গিভিং মি সো মাচ। যারা চিনত না আমাকে, তারাও আমাকে চিনেছে। সত্যি কথা, মাই পেরেন্টস আর সো প্রাউড। আর দু’জন মানুষের নাম আমি নিতে চাইব। এক চক্রবর্তী আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছেন এবং আর এক চক্রবর্তী আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে থাকতে হয়, সেটা শেখাচ্ছেন। প্রথমজন রাজ চক্রবর্তী। আর অন্যজন হলেন আমাদের ‘ভজগোবিন্দ’-র প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার স্নেহাশিস চক্রবর্তী… এই জগতে কীভাবে বাঁচতে হয়, সেটা স্নেহাশিসদা আমাকে প্রতিদিন হাতে করে শিখিয়ে চলেছেন।
অভিনয় বাদে ফেভারিট পাসটাইম?
স্বস্তিকা: ভীষণ ভাবে গান শুনি আর প্রচণ্ড ঘুমোতে ভালবাসি। বিশ্বাস করো, যে কোনও সময় যেখানে খুশি ঘুমোতে দাও, আমি ঘুমিয়ে পড়ব। আমার সিন না থাকলে আমি ঘুমোই, আমার সিন থাকলেও আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
একটু আগে তুমি বললে যে বয়ফ্রেন্ড…
স্বস্তিকা: আমি জানতাম তুমি এই প্রশ্নটা করবে… আমার বয়ফ্রেন্ডের বয়স ৪৩। আমার বয়ফ্রেন্ড প্রত্যেক ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এখনও আমি যখন ঘুম থেকে উঠি, তখন আমার জন্য চকোলেট আর বেলুন সাজিয়ে…
বুঝেছি, ওই সব কায়দা করলে চলবে না। বাবার কথা বলছ তো?
স্বস্তিকা: হা হা হা… প্রচুর প্রেম করেছি স্কুল লাইফে, কলেজ লাইফে। কিন্তু ঠিক আমাকে সামলানোর মতো না, আমি আমার বাবার পরে কাউকে খুঁজে পাই না। আমি চাই আমার বয়ফ্রেন্ড খুব ফাদারলি হোক। এমন একজন, যে আমাকে শাসন করবে। আমার ওই ন্যাকামি জিনিসটা পছন্দ হয় না। আমি এবেলা.ইন-কে রিকোয়েস্ট করব যদি আমার জন্য একজন বয়ফ্রেন্ড খুঁজে দেয় খুব ভাল হয়। আমি ছোট থেকে খুব প্যাম্পার্ড সিঙ্গল চাইল্ড। কিন্তু আমিও খুব কেয়ারিং। বুঝতেই পারছ, যে আমার বয়ফ্রেন্ড যে হবে সে চূড়ান্ত লেভেলে লাকি হবে। কিন্তু আমি চাই শ্যুটিং শেষ হলে একটু লং ড্রাইভে যাব, একটু আইসক্রিম খাব… চাহিদা অল্প, খুঁজে যাচ্ছি এখনও…
‘গোবিন্দ’ টাইপ হলে চলবে?
স্বস্তিকা: ও বাবা… রান্না করা, কাপড় কাচা, বাসন মাজা, জুতো সেলাই… এই সব কানের কাছে এসে বলবে? আমি আসলে নিজেই খুব বক বক করি। আমার যে বয়ফ্রেন্ড হবে, তাকে শুনতে হবে। দু’জনেই যদি বকবক করে যাই, তাহলে মুশকিল। তাই ‘গোবিন্দ’… ডালি-র স্টাইলে বলি… ‘না, না না না… গোবিন্দ চলবে না।’