সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর অভিনীত ‘অবলম্বন’ ছবি প্রথম মুক্তি পাচ্ছে ডিসেম্বরে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ হওয়ার আগেই ওই ছবির ডাবিং শেষ করে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর এটিই হবে পর তাঁরই অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’-এর শুটিং শেষ হওয়ার আগেই ‘অবলম্বন’ ছবির ডাবিং শেষ করেছিলেন। ‘অবলম্বন’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন তরুণ পরিচালক নাড়ুগোপাল মণ্ডল। এই নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনটি ছবির কাজ করলেন নাড়ুগোপাল। ‘অবলম্বন’ ছবিতে কাজ করছেন লিলি চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, মেঘনা হালদার প্রমুখ অভিনেতা-অভিনেত্রী। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই ছবিতে একজন লেখকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ছবির কাহিনিও গড়ে উঠেছে ওই লেখককে নিয়ে। ‘অবলম্বন’ নামের একটি উপন্যাস লেখার পর লেখক একসময় উপলব্ধি করেন তাঁর নিজের জীবনেও ওই উপন্যাসের চরিত্রগুলো ধরা দিচ্ছে।
এই ছবিতে একজন বিধবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি চক্রবর্তী। তাঁর আক্ষেপ, ‘অবলম্বন’ ছবিতে অভিনয় করলেও এই ছবিতে তাঁর সঙ্গে সৌমিত্রের একসঙ্গের কোনো দৃশ্য নেই।
পরিচালক নাড়ুগোপাল মণ্ডল জানান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই ছবি করতে গিয়ে তাঁকে দিয়েছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা। কোনো শর্ট একাধিকবার ধারণ করতে গেলে কখনো আপত্তি তোলেননি।
টানা ৪১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে গত রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় সৌমিত্রর জন্ম। তবে পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার গড়াইতীরের কয়া গ্রামে। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় সৌমিত্র অভিনীত ‘অপুর সংসার’।
প্রথম ছবিতেই সহজ অভিনয়ের সৌন্দর্যে উঠে আসেন আলোচনায়। সত্যজিতের হাত ধরে কেবল বাংলা বা ভারতীয় চলচ্চিত্র নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্র পায় নতুন এক শিল্পীকে। শিল্পী হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যাত্রা শুরু করেছিলেন অভিনয় দিয়ে। সেটি ছিল সূচনামাত্র। অভিনয়ের বাইরে ভিন্ন শিল্পের জগতেও পা রেখেছিলেন সার্থকতার সঙ্গে। কবিতা লিখেছেন, লিখেছেন গদ্য। মগ্ন হয়েছিলেন আবৃত্তিতে, রবীন্দ্রপাঠে, নাট্যসংগঠনে। জীবনের শেষ পর্বে ঝুঁকে পড়েছিলেন ছবি আঁকায়।
অপু, উদয়ন পণ্ডিত, ফেলুদা, অশোক গুপ্ত থেকে কিং লিয়ার—বাংলা চলচ্চিত্রে, নাটকে অভিনয় করে তিনি হয়ে ওঠেন অভিনয়ের কিংবদন্তি। নিজে পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘লিজিয়ন অব অনার’। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকে, বঙ্গভূষণসহ ভারতের জাতীয় স্তরের একাধিক পুরস্কার।