করোনাভাইরাসের কারণে সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে এসে আটকে পড়া বিক্ষুব্ধ প্রবাসীদের কাছে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
বুধবার সৌদিপ্রবাসীদের ছয় প্রতিনিধির সঙ্গে দুপুরের দিকে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ইমরান আহমদ।
বুধবার সকালে প্রবাসীরা রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন। প্রায় এক হাজার সৌদি প্রবাসী সেখানে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১টার দিকে সৌদি প্রবাসীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যায়। আধা ঘণ্টার আলোচনা শেষে তারা বাইরে বেরিয়ে আসে। পরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি প্রবাসীদের কাছে তিনি সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।
সৌদি আরবে যেতে উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না তারা। এতে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা গত রোববার থেকে বিক্ষোভ করছেন।
তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে যেতে না পারলে তাদের চাকরি হারাতে হবে।
সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার টিকিট না পেয়ে আজ সকালেও রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার প্রবাসী জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এভাবে ৬৪ জেলা থেকে কয়েক হাজার লোক এসে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। কুষ্টিয়ার কবির হোসেন বলেন, আমাদের আকামা ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সৌদি সরকার ঢুকতে দেবে না। আমরা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা যথাসময়ে সৌদিতে না এলে আমাদের করার কিছু নেই।
প্রবাসীরা বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাদের সবার রিটার্ন টিকিট কেনা আছে। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি সৌদিতে ফিরতে না যেতে পারেন, তা হলে যেন তিন মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সৌদি সরকারের কাছে সেই আবেদন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
টিকিট নিয়ে রাজধানীজুড়ে চলছে হাহাকার। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস কিছু যাত্রীকে টোকেন দিলেও এখনও টিকিট ইস্যু করেনি। যাদের রিটার্ন টিকিট আছে তাদের টিকিটও রি-ইস্যু করছে না।
হাজার হাজার যাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন ৩০০ জনকে টোকেন দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। এ কারণে সংস্থার একমাত্র কার্যালয় সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই।
ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার সৌদি প্রবাসী টিকিট কাটতে ছুটে আসছেন ঢাকায়। প্রতিদিনই এদের সংখ্যা বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কোনো ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে যাওয়া নিশ্চিত করতে সে দেশের সরকারকে তিন মাসের জন্য আকামার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের দূতাবাস এ অনুরোধ জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাদের সপ্তাহে দুটি সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। কাজেই তারা বেশি টিকিট বিক্রি করতে পারছে না।
এ কারণে রাস্তায় ভিড় জমে গেছে প্রবাসী যাত্রীদের। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বাংলাদেশ বিমানও সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে পরে অনুমতি না পাওয়ায় সরে এসেছে।
ফলে বিমানের টিকিট নিয়েও লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। টিকিট পেতে তাই বিমানের মতিঝিলসহ সব কটি সেলস কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সোমবার জানিয়েছেন, টিকিটের এই ক্রাইসিস দু-এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে।
তিনি বলেছেন, সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে যত ফ্লাইটের অনুমতি চাইবে তাদের তত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ বিমানকেও ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমানও সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে বলে জানিয়েছে। শিগগির বিমানের ল্যান্ডিং পারমিশনও হয়ে যাবে। এ জন্য কূটনৈতিকভাবে সব পর্যায় থেকে কাজ চলছে।
বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনস ফ্লাইট শুরু করলে এ পরিস্থিতি থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সৌদি এয়ারলাইনসকে দেয়া সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটের অনুমতি বাতিল করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তাদের আরও ফ্লাইট দেয়া হবে।
অনেকের কাছে রিটার্ন টিকিট থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারেননি। এখন সেই টিকিট কনফার্ম করতে এসেছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে-তারা কীভাবে যাবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কিন্তু শতচেষ্টা করেও কেউ নতুন করে রিটার্ন টিকিট রি-ইস্যু করতে পারেননি।