সোনার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। এতে সোনা খাত থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ করতে পারবে বলে মনে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। তাই সোনা-রুপা ও ধাতু দুটির তৈরি অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার কমানোর পাশাপাশি আসন্ন বাজেট উপলক্ষে আরও ১৪টি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত বাজুস কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট (২০২৪-২৫) সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম (১ ভরি) সোনার অলংকার কিনতে ভ্যাট ও মজুরিসহ ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা লাগে।
সংবাদ সম্মেলনে বাজুস আরও যেসব দাবি উপস্থাপন করে সেগুলো হলো, যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সব জুয়েলারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বিতরণ করতে হবে। অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসি-ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্যে রেয়াতি হারে ১ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করতে হবে। সেই সঙ্গে বর্তমানে বলবৎ থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এটি এবং ৫ শতাংশ এআইটি রহিত করতে হবে। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করতে হবে, এসডি ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসতে হবে, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে, এটি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করতে হবে। সেই সঙ্গে ৫ শতাংশ এআইটি এবং ৩ শতাংশ আরডি রহিত করতে হবে।
ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং এটি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সেইসঙ্গে বৈধপথে মসৃন হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃন হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করার শর্তে এসডি ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে এবং সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদানেরও দাবি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। তারা আরও বলছেন, আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’ এর আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮.২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করতে হবে।
বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন করা শর্তে রফতানিকারকদের মোট ভ্যালু এডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সেই সঙ্গে এইচএস কোর্ডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করার দাবি তাদের।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থার সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাজুস।
সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ সময় বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান প্রমুখ।