রিয়া চক্রবর্তী। সুশান্তের শেষ বান্ধবী। সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই যাঁর নাম উঠে আসছে বার বার। লকডাউনে তিনি সুশান্তের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে ছিলেন। গত ৬ জুন সুশান্তের বাড়ি ছাড়েন রিয়া। ১৪ জুন সুশান্তের মৃত্যু হয়। সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে যে মেয়ে অমিত শাহকে টুইট করেছিলেন আজ তিনিই সেই তদন্তের কেন্দ্রে! কেন এমন হল? সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বাবা ভারতীয় দণ্ডবিধির মোট ছ’টি ধারায় ছেলের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআই আর দায়ের করার পরেই আচমকা বদলে গিয়েছে তদন্তের ধারা। গোটা দেশ সুশান্তের মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। সুশান্তের মৃত্যু তদন্তে কর্ণ জোহর থেকে সঞ্জয়লীলা ভন্সালীর মতো ৩০ জন ব্যক্তিকে জেরা করার পরেও কেন শুধু এই বাঙালি মেয়ের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের মোড় ঘুরল?
সুশান্তের বাবার অভিযোগ, এক দিকে সুশান্তকে ধরে যেমন নিজের কেরিয়ার তৈরি করছিলেন রিয়া, অন্য দিকে পরিবারের সঙ্গে সুশান্তের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করেন তিনিই। সুশান্তের বাবা বিস্ময়ের সঙ্গে জানান, ২০১৯ পর্যন্ত সুশান্তের কোনও মানসিক সমস্যা ছিল না৷ রিয়ার জন্যই পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না অভিনেতার৷ কবে তাঁর মানসিক সমস্যা শুরু হল তাঁরা জানেন না।
তাঁর অভিযোগ, ছেলের কেরিয়ার শেষ করে দিতে চাইছিলেন রিয়া, এমনকি, তিনি সুশান্তকে জনসমক্ষে পাগল প্রমাণ করার জন্য মেডিক্যাল রিপোর্ট ফাঁসের ভয় দেখাতেন! সুশান্তের বাবা জানিয়েছেন, সুশান্ত ফিল্ম লাইন ছেড়ে দিতে চাইছিলেন৷ কেরলে গিয়ে অর্গ্যানিক ফার্মিং করবেন বলেও ভাবছিলেন৷ এক বন্ধুও এই ব্যাপারে রাজি ছিলেন৷ কিন্তু বাদ সাধেন রিয়া৷ বলেন, মুম্বই ছাড়লে তিনি সুশান্তের মানসিক চিকিৎসার রিপোর্ট তুলে ধরবেন মিডিয়ার সামনে৷ সুশান্তের মনে চাপ বাড়তে থাকে।
শুধু পরিবার থেকে সরে আসা নয়, সুশান্তের ডেবিট আর ক্রেডিট কার্ড ছিল রিয়ার হাতে। যেমন খুশি টাকা খরচ করতেন রিয়া, এমনই অভিযোগ করেছেন সুশান্তের বাবা৷ এমনকি, তাঁর ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়া ১৫ কোটি টাকাও সরিয়েছেন। সুশান্তের বাবার এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুম্বইয়ের ব্যাঙ্কে গিয়ে তল্লাশি করবে বিহার পুলিশ।
রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে সুশান্তের প্রেম নিয়ে কিছুই জানতেন না সুশান্তের পরিবার৷ রিয়াকে তাঁরা কখনও দেখেননি এবং সুশান্তের মুখেও কখনও রিয়ার নাম শোনেননি৷ এ কথা আগেই জানিয়েছিল সুশান্তের পরিবার৷ সুশান্তের বাবার অভিযোগ, সুশান্ত আগে যে বাড়িটায় বাস করতেন সেখানে ভূতপ্রেত আছে বলে সেই বাড়ি তাঁকে ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন রিয়া৷ সুশান্ত যে বাড়িতে আত্মহত্যা করেন সেই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন সুশান্তের শেষ গার্লফ্রেন্ড৷ সেখানে তিনি নিজের পরিবারের লোকদের নিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকতেন৷
সুশান্তের বাবা অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে পাগল প্রতিপন্ন করে অ্যাসাইলামে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছিলেন রিয়া৷ এর জন্য কোনও কারণ ছাড়াই ওঁকে মানসিক অসুস্থতার ওষুধ খাওয়াতে শুরু করেছিলেন৷ প্রথমে তাঁকে ডেঙ্গির ওষুধ বলে মানসিক অসুস্থতার ওষুধ খাওয়াতে শুরু করেছিলেন, তার পর ড্রাগ ওভারডোজের জেরে আস্তে আস্তে মানসিক স্থিতাবস্থা হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি৷
এমনও অভিযোগ উঠেছে যে সুশান্তের মোবাইল নম্বর অবধি বদলে দিয়েছিলেন রিয়া৷ রেখেছিলেন নিজস্ব পরিচারক। যাতে সুশান্ত নিজের পরিবার ও পুরনো লোকদের থেকে দূরে থাকেন৷ সুশান্তের অ্যাকাউন্টে থাকা কোটি কোটি টাকা রিয়া ও তাঁর পরিবারের লোকেরা গায়েব করে দেন৷ সুশান্তের কোনও ফিল্মের অফার এলে রিয়াকেই হিরোইন হিসেবে নিতে হবে বলে চাপ দিতে থাকেন রিয়া।
সুশান্তের বাবার অভিযোগ, দিশার আত্মহত্যার ঘটনায় সুশান্তের নাম জড়িয়ে দেওয়া হবে বলে রিয়া নাকি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ছেলের মনে। এমনকি, রিয়ার পাতা ফাঁদে তিনি পা দিয়ে ফেলেছেন বলেও দিদিকে নাকি ভয়ের কথা জানিয়েছিলেন সুশান্ত। দিশার আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে যেতে পারে বলে সুশান্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয় প্রয়াত অভিনেতার পরিবারের তরফে।
যদিও মুম্বই পুলিশের মতে, সুশান্ত-কাণ্ডে প্রথমেই যখন তাঁর পরিবারের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল তখন রিয়াকে নিয়ে এ সব কিছুই বলেনি সুশান্তের পরিবার। এ প্রসঙ্গে যদিও সুশান্তের পরিবারের আইনজীবী সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানান, সুশান্তের এই হঠাৎ চলে যাওয়ায় পরিবারের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, মুম্বই পুলিশ নাকি অনেক বার বলা সত্ত্বেও এফআইআর নিচ্ছিল না। বলিউডের বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলির নাম নেওয়ার জন্য জোর দিচ্ছিলেন তাঁরা।
অন্য দিকে, বিহার পুলিশের দলটি মুম্বইয়ে হাজির হওয়ার আগেই অর্ন্তবর্তী জামিনের আবেদন করেন রিয়া চক্রবর্তী। পাশাপাশি, সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত যাতে বিহার থেকে মুম্বইতে নিয়ে আসা হয় তার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন করেন রিয়া চক্রবর্তী। রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন করেছেন বলে খবর। মহারাষ্ট্রের পালঘর হত্যাকাণ্ড, সঞ্জয় দত্তের মামলা, সলমন খানের মামলার মতো একাধিক হাই প্রোফাইল মামলায় আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন এই সতীশ মানশিন্ডে।
অভিনেত্রী শারলিন চোপড়া টুইটে বলেছেন, “আমি সিবিআইকে তদন্তের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সারা বিশ্ব জানে সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়। রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর শুধু হিমশৈলের চূড়া। আসল সত্য জানার সময় হয়ে এসেছে। এ বার তদন্তের গভীরে যেতে হবে।” শারলিনের এই টুইট মুহূর্তে ভাইরাল। অজস্র কমেন্ট আসছে রিয়ার বিরুদ্ধে। সুশান্তের তুতো ভাই নীরজ কুমার জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সকলের একটাই দাবি, রিয়াকে যাতে মুম্বই পুলিশ হেফাজতে নেয়।
একহাত নিয়েছেন কঙ্গনাও। তাঁর প্রশ্ন, “সুশান্তের মৃত্যুর কয়েক দিন পর ফারহান আখতারের বাড়িতে কী করতে গিয়েছিলেন রিয়া?” এখানেই শেষ নয়, রিয়াকে ‘গোল্ড ডিগার’, অর্থাৎ সোনা খননকারী বলে আক্রমণ করেন কঙ্গনা। সুশান্তের মৃত্যুর বেশ কয়েক দিন পর রিয়া যে ‘আখতার’ বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেই ছবিও শেয়ার করেন তিনি। এমনকি, মহেশ ভট্টের সঙ্গে রিয়ার ভাইরাল হওয়া ঘনিষ্ঠ ছবিও শেয়ার করেন। লেখেন, “রিয়া নিশ্চিত রূপেই সোনা খননকারী, তবে সুশান্তই কি রিয়ার একমাত্র আয়ের উৎস? সুশান্তকে মারার পিছনে কি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে তাঁর কাছে? নাকি বলিউড মাফিয়ারা রিয়াকে ব্যবহার করেছিল? সুইসাইড গ্যাং কি এখন রিয়াকে বলি করছে?’’
রিয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর-এর পর বুধবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ একটি বিশেষ বৈঠক ডাকেন।