বাজারে সুগন্ধি চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অবশেষে রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সব ধরনের সুগন্ধি চাল রপ্তানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের মোট ৪১টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাল রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেল। এই ৪১ প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদিত কোটার মধ্যে যে পরিমাণ এখনো রপ্তানি করেনি, তা আর রপ্তানি করতে পারবে না বলে জানা গেছে।
রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগাম অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডাররা সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ১৩৬টি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করছে।
সুগন্ধি চালসহ সব ধরনের চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লেখা চিঠিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের শুরু থেকে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সময় তা ওঠানামা করে ওই বছরের অক্টোবরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত যা অপরিবর্তিত থাকে।
২০২১ সালের শুরু থেকে সব ধরনের চালের দাম আবারও বাড়তে থাকে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে মোটা চালের মূল্য স্থিতিশীল হয়। কিন্তু মাঝারি, সরু ও সুগন্ধি চালের মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুগন্ধি চালসহ সব ধরনের চাল রপ্তানি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চালের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও সুগন্ধি ও সরু চালের বাজারদর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক, যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সে কারণে সুগন্ধি চালসহ সব প্রকার চাল রপ্তানি আপাতত বন্ধ করা আবশ্যক।’
কয়েক মাস ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতি চড়া। মে মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বন্যা। এতে আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম। এ পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা গত সোমবার থেকে মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত চাহিদাপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।