সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা পাঠানোর নতুন রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশিদের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। গত ১২ মাসেই জমা হয়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের এই বিপুল অর্থ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কারা টাকা পাঠাচ্ছে? বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সুইজারল্যান্ডের ন্যাশনাল ব্যাংক বার্ষিক প্রতিবেদনের ডাটা অংশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
সুইস ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিরা টাকা জমা রাখে এবং সুইস ব্যাংকে এই টাকা রাখাটাকে অনেকে নিরাপদ মনে করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশি আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক যা বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছে এই টাকা পাচার করছে কারা?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে , সুইস ব্যাংকে গত এক বছরে যে টাকা পাঠানো হয়েছে তার সিংহভাগই আমলাদের নিয়ন্ত্রনে। আমলারাই বিদেশে অর্থ পাচারের শীর্ষে রয়েছেন।
শুধু অর্থ পাচার নয়, বিদেশে অভিবাসন গ্রহণ, বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদি ক্রয়েও আমলারা শীর্ষে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, গত এক বছরে অবসর গ্রহণ করা অন্তত পাঁচজন সচিব সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। এরা সবাই প্রভাবশালী সচিব ছিলেন। এদের মধ্যে একজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন এক বছরের জন্য। এখন তিনি অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকছেন। আরেকজন সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি তার পরিবার কানাডায় রাখেন। কিন্তু সুইস ব্যাংকে তিনি টাকা পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও আরও তিনজন আমলার সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠানোর খবর জানা গেছে। যদিও কারা কারা এই টাকার মালিক সুইস ব্যাংক সে সম্পর্কে তথ্য জানায়নি।
গত এক বছরে সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে আমলাদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনীতিবিদদের নামকও দেখা গেছে। সুইস ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে তারেক জিয়ার একাউন্ট রয়েছে এবং নির্বাচনের সময় বা কমিটি গঠনের যে লেনদেনগুলো হয়, সেই লেনদেনগুলো সুইস ব্যাংকেই জমা হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং তার পরিবারেরও সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
সম্প্রতি সরকার বিদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সুযোগ যারা টাকা পাচার করেছেন তারা কাজে লাগাবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম।