আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৬ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশের ১ লাখ ১ হাজার, আনসার বাহিনীর ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও ৪১ হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর ২ হাজার ২১০ প্লাটুন (৬৬ হাজার ৩০০ জন সদস্য) ভোটের দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে বিজিবি ১ হাজার ১০৬ প্লাটুন (প্লাটুন প্রতি ৩০ জন); কোস্ট গার্ড ৪২ প্লাটুন, র্যাব ৬০০ প্লাটুন, সেনাবাহিনীর ৪১৪ প্লাটুন ও নৌ বাহিনীর ৪৮ প্লাটুন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়বে। প্রায় ৯ লাখ প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা ভোটগ্রহণের ভাতা বাবদ গত নির্বাচনের চেয়ে এবার দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া যাতায়াত বাবদ তারা প্রত্যেকে অতিরিক্ত আরও ১ হাজার টাকা করে পাবেন। শুধু ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাবদ ব্যয় গত নির্বাচনের তুলনায় বেড়েছে ২৮০ কোটি টাকা। এগুলোসহ নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া নির্বাচনি প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় হচ্ছে আরও ১৩৫ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা- এই দুই খাত মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। পরে তা আরও বেড়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে যে পরিমাণ টাকা চাহিদা দেওয়া হয়, সাধারণত তা পুরোপুরি দেওয়া হয় না। নির্বাচনে কোনও বাহিনীর কত সংখ্যক সদস্য কয়দিন মাঠে থাকবেন; তার উপর টাকা বরাদ্দের পরিমাণ নির্ভর করে। গত নির্বাচনেও তাই হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ১৫ দিন পর পর্যন্ত প্রয়োজনে মাঠে পুলিশের টহল রাখতে চায় ইসি। এবার আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় বাড়ার অনেকগুলোর কারণের মধ্যে এটিও একটি।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। সব দল অংশ নেওয়ায় ওই নিয়র্বাচনে সহিংসতাও কম ছিল। এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের পরিবেশ অবনতির আশঙ্কার কথা জানায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন উপলক্ষ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, বড় কোনও দল নির্বাচনে না আসলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
ইসির ওই কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোটাদাগে তিনটি খাতে বাজেট ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ। সাধারণত নির্বাচন পরিচালনা খাতের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা খাতে দ্বিগুণ বাজেট ধরা হয়। এবারের নির্বাচনি বাজেট ব্যতিক্রম। আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা; এই দুই খাতের বাজেট প্রায় সমানে সমান।
জাতীয় নির্বাচনে ব্যয় বাড়ার কারণগুলোর বিষয়ে তারা আরও জানান, গতকাল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নির্বাচনের প্রায় দুইশ’ খাত-উপ খাতে বরাদ্দের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ বেড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৭ হাজার ৩১৯টি ভোটকক্ষ ছিল। তখন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন। আর ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ৮ হাজার।
এবার ভোটার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটকক্ষ হিসাবে ধরে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসি। এবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে প্রায় ৯ লাখ। একইভাবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও বাড়বে। যদিও এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কতজন সদস্য মোতায়েন করা হবে সে সংক্রান্ত পরিপত্র এখনও জারি করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থগিত হওয়া কেন্দ্র এবং যারা একাধিক আসনে সংসদ সদস্য হবেন, তাদের একটি ছাড়া বাকি ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচন করতে হবে। ওইসব উপনির্বাচনের ব্যয় ধরেই এই হিসাবে করা হয়েছে।