সরকার দেশি চিনির দর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নেয়। তবুও ওই রাতেই দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা তৈরি হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আমদানি করা প্যাকেটজাত সাদা চিনির কেজি কেউ কেউ ১৬০ টাকায় বিক্রি করা শুরু করেন। পরে দাম কিছুটা কমে এলেও এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, দু-এক দিনের মধ্যেই চিনির দর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
তিন-চার দিন আগেও বাজারে খোলা চিনির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকার আশপাশে। দুই-তিন মাস ধরে এ দরেই বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল শনিবার ঢাকার কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিনির কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে দু’দিন ধরে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা দরে। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তিন-চার দিন আগে প্যাকেট চিনির কেজি ছিল ১৪৫ থেকে ১৪৮ টাকা। পাইকারিতেও প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারি চিনির দর বাড়ানোর ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে এখন পাইকারি পর্যায়ে ঠিক হয়ে গেছে। খুচরায়ও কমে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারে রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছিলেন, রোজার সময় কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তখন অনেকেই সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেন। আমদানি ও বাজারজাতকারীরা যত বড় ব্যবসায়ী হোক না কেন, অযথা পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু সেই হুঁশিয়ারি কাজে আসেনি। প্রতিমন্ত্রীর ওই সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই দিন রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) নিজেদের উৎপাদিত চিনির কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে ঘোষণা দেওয়ার পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করে নেয় সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই স্বল্প সময়ে অস্থিরতা তৈরি হয় চিনির বাজারে। সঙ্গে সঙ্গেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যায়। দু’দিন আগের ঘোষণাটি কার্যকর না হলেও কিছু ব্যবসায়ী ১৬০ টাকা দরে প্যাকেট চিনি বিক্রি শুরু করেন।
ওই দিন কারওয়ান বাজার থেকে একটি বড় ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত চিনি ১৬০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলেন তেজগাঁও এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান নামের এক চা দোকানদার। গতকাল সমকালকে তিনি ওই প্যাকেট দেখিয়ে বলেন, ‘গায়ে লেখা দর ১৪৪ টাকা। কিন্তু কিনতে হয়েছে ১৬০ টাকা দরে। তাও পাওয়া যচ্ছিল না। এক দোকান মাত্র দুই কেজি বিক্রি করেছে।’
হঠাৎ কেন দর বেড়েছে– জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম সমকালকে বলেন, চিনিকল করপোরেশনের দাম বাড়ানোর ওই ঘোষণা বাজারে বেশ প্রভাব ফেলছে। মিলাররাও নড়েচড়ে বসেছিল। ওই রাতে পাইকারিতে প্রতি মণে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছিল। গতকাল তা আবার কমে গেছে। খুচরা পর্যায়েও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, রোজায় চিনির চাহিদা বাড়বে। তাতে সরবরাহ ঠিক না থাকলে চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে। এখনই খুচরা, পাইকারি ও মিলগেটে চিনির দর নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার।