The news is by your side.

সরকারি আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার ৮০% ব্যয় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

0 124

২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে  অর্থাৎ গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ শতাংশই ব্যয় করেছে সরকারি আমদানিতে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭৮০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে, যার মধ্যে ৭২০ কোটি ডলার খাদ্য, সার ও জ্বালানি সামগ্রী আমদানির জন্য দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে।

গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ হাজার ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে পণ্য আমদানি হয় ৮৪১ কোটি ডলারের, যা উল্লেখিত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে হওয়া মোট আমদানির ৮০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলে ২৮৫ কোটি ডলারের, যা উল্লেখিত সময়ে ব্যাংকটির মোট আমদানি ব্যয়ের ৯৪ শতাংশ। ওই সময়ে বেসরকারিভাবে মাত্র ১৬১ মিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়।

এইকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মোট আমদানির মধ্যে সরকারি আমদানির হার ছিল ৬৮ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের মোট আমদানির মধ্যে সরকারি আমদানির হার ছিল ৭৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের মোট আমদানির মধ্যে সরকারি আমদানির হার ছিল ৮০ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলেন, দেশের ডলারের সংকটের কারণে রিজার্ভ কমতে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। এখন যা ডলার বিক্রি করছে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছেই।

এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির পূর্বে কোন এলসি বাবদ ডলার ছাড় করবে তা যাচাই-বাচাই করে দিচ্ছে। তা যদি সরকারি আমদানি হয় অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হয় তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার দিচ্ছে। যার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমদানির পরিমাণ বেশি।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর  বলেন, “সরকারি আমদানির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের ডলার সরবরাহ করে থাকে। আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে সরকারি আমদানিকে বেশি অগ্রধিকার দিচ্ছি। কারণ আমাদের লক্ষ্য প্রফিট হলেও সরকারি আমদানিতে নাম মাত্র প্রফিটে আমরা এলসিগুলো খুলছি।”

সরকারি আমদানিতে সাধারণত চাল, গম, সার এবং পেট্রোলিয়াম অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় খাদ্য আমদানিকারক ছিল দেশের বেসরকারি খাত; চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও একই চিত্র দেখা গেছে।

কিন্তু, বর্তমানে এলসি খোলার পরিমাণ কমে আসায় রমজানের আগে খাদ্যদ্রব্যের আমদানি নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ী ও বেসরকারি আমদানিকারকরা। রমজানের সময় ছোলা, খেজুর, ভোজ্যতেল এবং চিনির মতো আমদানি করা পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তাদের আশঙ্কা, খাদ্যপণ্যগুলোর সরবরাহ ব্যাহত হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

এদিকে, ডলার সরবরাহে লাগাম টানার ফলে তারাও এলসি খুলতে পারছেনা বলে জানিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। গত বছরের অক্টোবরে খাদ্যসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের বিষয়ে তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর পরিবর্তে, বেসরকারি ঋণদাতাদেরকে নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমদানির খরচ মেটাতে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার ফলে জুলাই-ডিসেম্বর মাসে সামগ্রিক আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার পরিমাণ খুবই কম। কারণ তারা এই সময়ে এলসি খোলার চেয়ে ডলার সংগ্রহে বেশি নজর দিচ্ছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের তুলনায় আমদানিতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদ বলেন, তারা সরকারি পণ্যের পাশাপাশি বেসরকারি আমদানিকারকদেরও সহায়তা দিচ্ছেন।

তিনি  বলেন, “যদিও আমাদের ওপর সরকারি আমদানিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চাপ ছিল, আমরা প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছি, এরমধ্যে বেশিরভাগই দেশের প্রধান বেসরকারি ব্যবসায়ীদের জন্য খোলা হয়েছে।”

এমডি দাবি করেন, গত বছরের জুন-জুলাইয়ে কমে আসলেও, জনতা ব্যাংকের আমদানি এলসি খোলা প্রায় স্বাভাবিক ছিল।

“আমরা এখন একটু ধীর গতিতে এগোচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা আগে ক্লায়েন্ট প্রতি ২-৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি খুলেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আমাদেরকে তা কিছুটা কমাতে বলেছে,” যোগ করেন তিনি।

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.