The news is by your side.

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ছে

0 13

 

সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) বুধবার অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ আইআরডিকে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ বিভাগের তৈরি এ বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। আর সুপারিশটি এসেছে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) থেকে। এ কমিটিকে সহায়তা করেছে অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ।

জানতে চাইলে আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান জানান, তিনি বিদেশে আছেন। তবে এ বিষয়ে কাজ চলছিল বলে জানতেন। ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সংগতি রেখে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির উদ্যোগকে তিনি সমর্থন করেন।

আইআরডিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণ করা হবে ৫ বছর মেয়াদি ও ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার অনুযায়ী। তবে নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করতে এ দুই ধরনের ট্রেজারি বন্ডের সর্বশেষ ছয়টি নিলামকে বিবেচনায় রাখতে হবে। ছয় মাসের বন্ডের সুদের গড় হার বেরও করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এহার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন হার ১ জানুয়ারি থেকে জুন মাসের জন্য। ছয় মাস পর নতুন হার নির্ধারণ করা হবে, যা প্রযোজ্য হবে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য। নতুন হার প্রযোজ্য হবে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে ১ জানুয়ারির আগের বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আগের হারেই পাবেন।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির সংখ্যা ৯। এগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া রয়েছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। প্রবাসীদের জন্য বন্ড রয়েছে তিনটি—ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। বন্ডের মুনাফার হারের কোনো পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়নি চিঠিতে। যদিও এ তিনটিও সঞ্চয় কর্মসূচি।

চিঠির সঙ্গে অর্থ বিভাগ দুটি সংযুক্তিও দিয়েছে, যাতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি হার রাখারও সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।

বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ হচ্ছে

শুধু সুদের হারের পরিবর্তন নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি—১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।

নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন সামান্য কম অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে। বরাবরের মতো নতুন হারেও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙালে সব সঞ্চয়পত্রের বিপরীতেই মুনাফার হার কমবে।

নতুন হার ১ জানুয়ারি থেকে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলা হলেও এরই মধ্যে আট দিন পার হয়ে গেছে এবং আইআরডির প্রজ্ঞাপন হতে হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে। এই সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে এবং আরও হবে। সে ক্ষেত্রে কী হবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, একটি উপায় বের করা হবে। আর আইআরডি প্রজ্ঞাপন করলে আগের তিন ধাপসংবলিত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদের হারও এখন বেশি। সরকার তাই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজস্ব আয় ভালো না থাকার কারণেও সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.