বহুল আলোচিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে কোন প্রার্থীই ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পাওয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে থাকা এবং শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে আগামী ৫ জুলাই ফিরতি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে রাজধানী তেহরানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনে স্থাপিত নির্বাচনি সদরদপ্তরের মুখপাত্র মোহসেন ইসলামি শনিবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন।
এতে দেখা যাচ্ছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ান ১ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৯১ ভোট পেয়ে প্রথম পর্বে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক সাঈদ জালিলি পেয়েছেন ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪০ ভোট। পেজেশকিয়ান সর্বাধিক ভোট পেলেও শতকরা হিসেবে তিনি মোট গৃহিত ভোটের ৪২.৫৪ শতাংশ পেয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনের বাকি দুই প্রার্থী পার্লামেন্ট স্পিকার বাকের গালিবাফ পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ ভোট এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পুরমোহাম্মাদি পেয়েছেন ২ লাখ ৬ হাজার ৩৯৭ ভোট।
এদিকে শুক্রবারের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী পেজেশকিয়ান শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটাভুটি রান-অফ বা দ্বিতীয় পর্বে গড়িয়েছে।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট পেতে ব্যর্থ হলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৫ জুলাই দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণের তারিখ আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয় পর্বের ভোটের জন্য ইতোমধ্যেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন শীর্ষ দুই প্রার্থী সাঈদ জালিলি ও মাসুদ পেজেশকিয়ান।
ইরানের নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, প্রথম পর্বের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হওয়ার মুহূর্ত থেকে শীর্ষ দুই প্রার্থী তাদের প্রচারাভিযান শুরু করতে পারবেন। যা চলবে দ্বিতীয় পর্বের ভোটগ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত।
এর আগে ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময়সীমা শুক্রবার তিন দফা বাড়ানোর পর শেষ পর্যন্ত তা রাত ১২টায় শেষ হয়।
শুক্রবারের ভোটগ্রহণের জন্য ইরানজুড়ে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া ৯৫টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী ইরানি নাগরিকদের জন্য বিশ্বজুড়ে ৩১৪টি ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিল। ওইসব কেন্দ্রেও ইরান সময় শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়।
এ নির্বাচনে ইরানে নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে মোট ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ ভোটার। অর্থাৎ এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করেছে।
ইরানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মেয়াদ মূলত চার বছর। সে হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নির্ধারিত ছিল ২০২৫ সালের জুন মাস। তবে গত ১৯ মে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার সাত সফরসঙ্গীসহ এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায়, এক বছর আগেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মোখবের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার তত্ত্বাবধানে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তথ্যসূত্র: ইরনা