শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সঙ্কট বাংলাদেশে হবে না বলেই জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভরসা, বাংলাদেশের মেপে পা ফেলার নীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের অর্থনীতি অনেক শক্তসমর্থ। কারণ বাংলাদেশ আগাম পরিকল্পনা এবং হিসেব করে কাজ করে।’’
৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের ‘পরীক্ষিত’ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেছেন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সমস্যা বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ঋণের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। উন্নয়নের কথা ভেবে ঋণ প্রদানকারী দেশগুলির থেকে মোটা সুদে ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু শেষে গিয়ে আর সেই ঋণ শোধ করতে পারে না। যদিও বাংলাদেশের ঋণনীতিতে পূর্ণ আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ঋণ নেওয়ার সময় অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে পদক্ষেপ করে। শুধু অর্থের অপচয় করার জন্য ঋণ গ্রহণ করে না। বরং, আগে দেখে নেয় যার জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে সেই উন্নয়ন সত্যিই কতটা উপযোগী হবে দেশের উন্নতি এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য। তার পরই ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সব সময় আমাদের প্রাপ্য বুঝে নিই। দেখ নিই এই ঋণের বদলে আমাদের হাতে কী আসছে? কী ভাবে এর সাহায্যে আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে। মানুষের উপকার হবে? না হলে অকারণ অর্থের অপচয় করি না।’’
প্রধানমন্ত্রী বেশ জোর দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার ভুল বাংলাদেশ করেনি এবং করবেও না। তার কারণ বাংলাদেশ সামর্থ্য বুঝে ঋণ নেয় আর সেই ঋণের অর্থ সময়ে মিটিয়েও দেয়। যে কারণে বাংলাদেশের ঋণের হার শ্রীলঙ্কার তুলনায় বেশ কম। তবে একই সঙ্গে হাসিনা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যে একা শ্রীলঙ্কাকেই যেতে হচ্ছে, তা নয়। গোটা পৃথিবীই এখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের মতো সেই কঠিন সময় সামলাচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে, কেন না ওই দেশগুলি থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সত্যিই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আটকা পড়ে এবং তারা পোল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। কিন্তু আপনি যখন আপনাদের শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করলেন তখন আমাদের শিক্ষার্থীদেরও দেশে ফিরে এনেছেন। আপনি সত্যি স্পষ্টভাবের বন্ধুত্বের সৌহার্দ্য দেখিয়েছেন। এই উদ্যোগ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমার ধন্যবাদ।
এছাড়া ভারতীয় সরকারের ভ্যাকসিন মৈত্রী প্রোগ্রামের প্রশংসা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী মোদির নেওয়া একটি অত্যন্ত ‘বিচক্ষণ’ উদ্যোগ।
এই নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সত্যি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ দেই। আপনারা জানেন শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে ভ্যাকসিন প্রদান করেছেন এবং এটি সত্যিই খুব, খুব সহায়ক।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ভারতকে ‘পরীক্ষিত’ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দেশটি প্রয়োজনের সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রথমে ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়েও।