করোনা পরিস্থিতি সঙ্কটজনক থেকে অতি সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে আমেরিকায়। বড় বড় শহরের সীমানা ছাড়িয়ে করোনা থাবা বসাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও। ফলে হাসপাতালগুলোতে আর তিল ধারণের জায়গা নেই। হন্যে হয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালগুলোতে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে কোভিড রোগীদের।
বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই কয়েকটা মাস অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শীতের এই সময়ে কোভিডের সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। হচ্ছেও তাই। আমেরিকায় সংক্রমণ বাড়ছে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে শয্যা, চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আকাল দেখা দিয়েছে।
আমেরিকার মিডওয়েস্টে ওহায়ো এবং ডাকোটার মাঝে যে সব অঞ্চল রয়েছে সেখানে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হচ্ছে। ওই সব অঞ্চলে প্রতি দিন দ্বিগুণেরও বেশি সংক্রমণ ধরা পড়ছে। জুনের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মিডওয়েস্টের ওই অঞ্চলগুলিতে কোভিডের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়েছে। কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্ট নামে এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
আমেরিকায় ইতিমধ্যেই আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর হার সামান্য কমলেও সংক্রমণের হার কিন্তু বেড়েই চলেছে। ছোট ছোট হাসপাতালগুলোতে রেমডেসিভির এবং ডেক্সামেথাসোন-এর মতো ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউ-এর সুবিধা না থাকার কারণে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান।
চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা কোভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণকেই দায়ী করেছেন। ভয়ানক পরিস্থিতিতেও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। কোনও কোভিড রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর যে তাতেই মৃত্যু হয়েছে এ কথা মানতে চাইছেন না রোগীর আত্মীয়রা। মধ্য-পশ্চিমের যে স্টেটগুলো রয়েছে সেখানে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
যেমন নেব্রাস্কা-র গভর্নর জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করবে না। ফলে সেখানেও মাস্ক নিয়ে একটা অনীহা তৈরি হয়েছে। সাউথ ডাকোটা-র গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেননি। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। তিনি গোটা বিষয়টি জনসাধারণের নিজ নিজ দায়িত্বের উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার বার সতর্ক করার পরেও এই অঞ্চলগুলোতে মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা যায়নি। ফলে আমেরিকা যে আরও শোচনীয় দিন দেখতে চলেছে সেই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এক চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি।