বিনোদন প্রতিবেদক
ছোটপর্দার অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী জিনাত সানু স্বাগতা। প্রায় ২০ বছররের ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় অনেক নাটক। কয়েক বছর খুব একটা অভিনয়ে পাওয়া যায়নি তাকে। বলা চলে, বিরতি কাটিয়ে এখন নিয়মিত হচ্ছেন। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে দেওয়া ‘লিভ টুগেদার’ নিয়ে তার মন্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানতে চাই, ‘লিভ টুগেদার’ নিয়ে আপনার করা মন্তব্য নিয়ে কয়েকদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এই বিষয়ে নিয়ে আমার কিছু বলার নাই। তার চেয়ে বড় কথা, আমি তো অন্য কারও জীবন নিয়ে কিছু বলিনি। আমার জীবন নিয়ে জানতে চেয়েছে, আমি সেটাই বলেছি। এছাড়া আমি অনেকগুলো ভালো কথাও বলেছি কিন্তু সেটা প্রচারে আসেনি। অনেকেই দুই-তিনবার বিয়ে করে, কিন্তু তাদের নিয়ে খুব বেশি কথা হয়নি। সবার কাজ নিয়েই বেশি কথা হয়। আমি মনে করি শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে না বরং কাজ নিয়েই কথা উচিৎ।
ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে একজন আইনজীবী আপনাক লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টা কতটা সত্য?
এটা গুজব। আমার কাছে লিগ্যাল নোটিশের কোনো চিঠি বা কাগজ আসেনি। কে পাঠিয়েছে সেটাও জানি না।
আপনাকে নাটকের অভিনেত্রী হিসেবেই মানুষ চেনে। অনেকদিন নাটক থেকে দূরে থাকার কারণ?
আপাতত আমি নাটক করতে চাচ্ছি না। কারণ, দর্শক যে নাটক থেকে আমাদের চেনে নাটকের সেই ধারা, গল্প কিংবা মান কোনোটাই এখন নেই। সেই সঙ্গে এখন নাটকের বাজেটও কমেছে। কম বাজেটে নাটক করে সেটা সুন্দর করা যায় না। উল্টো মান খারাপ হয়েছে যায়। তাই আপাতত নাটকে অভিনয় নিয়ে ভাবছি না।
নাটকের মান খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি কী মনে করেন?
সবচেয়ে বড় কথা এখনও প্রচুর নাটক হচ্ছে কিন্তু সেগুলো মানের দিক দিয়ে অতটা ভালো না। মাঝে মধ্যে শোনা যায়, নাটকে নাকি থাপ্পড় মারলে হিট হয়। শুনে আশ্চর্য লাগে। ভাইরালের নেশায় সবাই ব্যস্ত। একটা সময় ছিল, টিভিতে একটা নাটক প্রচার হতে কয়েকটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। এখন সেটা নেই। হাজার হাজার ইউটিউব চ্যানেল। নিজেই নিজের চ্যানেলের জন্য নাটক বানিয়ে অভিনয় করে। গোঁজামিল দিয়ে কিছু একটা বানিয়েই ছাড়তে পারলেই হল। তবে হ্যাঁ, আগে যারা সুযোগ পেতো না এখন তার সুযোগ পাচ্ছে। সেটা দিয়ে তো নাটকের মানের কথা ভাবলে হবে না।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন নতুন। সিনিয়র শিল্পরাও এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। আপনার ভাবনা?
নতুন সবকিছুই ভালো। আর এই প্ল্যাটফর্মে বাজেট ও গল্প দুটোই সুন্দর। এই জন্য সিনিয়র শিল্পীরা কাজ করছে। আমিও এই প্ল্যাটফর্ম দুটি কাজ করেছি। এরপর আর শক্ত কোনো গল্প আমার কাছে আসেনি। আমি যেহেতু অভিনয় করি সেহেতু আমার অভিনয়ের একটা ক্ষুধা আছেই। সুন্দর গল্প-চরিত্র আসলে অবশ্যই কাজ করবো।
অভিনয়ে প্রায় ২০ বছর কাটিয়ে দিলেন। এই সময় এসে কোন চরিত্র-গল্পতে অভিনয় করতে চাচ্ছেন?
২০ বছর হল ধারাবাহিক নাটক, একক নাটক ও সিনেমায় কাজ করেই চলছি। বয়সটাও বেশ হয়েছে। একটা পরিবর্তন তো আনা দরকার। আমি তো এখন হট নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে চাইলে হবে না। দর্শককে সেটা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সামাজিক প্রতিশ্রুতিরও একটা ব্যাপার আছে। সেটা হিসেব করে চরিত্র বেইজ কাজ করতে চাই।
কিছুদিন আগে শোনা গিয়েছিল, বাবার স্কুল নিয়ে কাজ করছেন। সেটার কতদূর এগোলো?
বাড়িধারায় একটা স্কুল নিয়ে কাজ করছি। ‘আনন্দম সংগীতাঙ্গন ফাউন্ডেশন’ নামে এই প্রতিষ্ঠানটি পুরোটা অলাভজনক প্রজেক্ট। মূলত এটা আমার বাবার স্কুল ছিল যার বয়স ৩৮ বছর। এটার নিদিষ্ট কোনো জায়গা ছিল না। স্কুলটি ফাউন্ডেশন আকারে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি যাতে আমি মরে গেলেও পরবর্তী জেনারেশন পেতে পারে।
২০২৪ সাল তো প্রায় শেষের দিকে। বছরটা কেমন গেল?
বছরের শুরুতে বিয়ে করেছি। অভিনেত্রী হিসেবে বলতে গেলে এবছর অভিনয়টা কম হয়েছে। শুধু ‘দেয়ালের দেশ’ নামে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া সংগীতশিল্পী হিসেবে বছরের প্রথম থেকেই গান লিখছি ও সুর করছি যা আমি আগে কখনো করিনি। এটা আমার জীবনের নতুন সংযোজন। আর বাবার স্কুল ‘আনন্দম সংগীতাঙ্গন ফাউন্ডেশন’র সিলেবাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে বছরটা দুর্দান্ত কেটেছে।
২০২৫ সালের পরিকল্পনা?
দুটি সিনেমার কথা হয়েছে। সেগুলোর শুটিং বছরের শুরুর দিকে শুরু হওয়ার কথা। নাটকের গল্প ও ওয়ের সিরিজের গল্পও আসছে। আর বাবার স্কুল কাজ করতে চাই। সব মিলিয়ে বলতে পারি। ২০২৫ সালে অভিনয়, স্কুল ও গান নিয়েই আমার পুরো পরিকল্পনা। বাকীটা সৃষ্টিকর্তার হতে।