ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে হারিয়ে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস। সোমবার শাসক রক্ষণশীল দলের (কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি) তরফে ভোটের ফল ঘোষণা করে এ কথা জানানো হয়েছে। ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি।
ভোটে অবশ্য ব্রিটিশ আম নাগরিকেরা অংশ নিতে পারেননি। সে দেশের শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টির ১ লক্ষ ৬০ হাজার সদস্য ভোট দিয়ে ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ লিজকে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বরিসের আনুষ্ঠানিক ইস্তফা ঘোষণার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন লিজ। মার্গারেট থ্যাচার এবং টেরেসা মের পর তৃতীয় মহিলা হিসেবে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হবেন তিনি।
রবিবার থেকেই অনলাইন আর ব্যালটে দেওয়া ভোটের গণনা শুরু হয়েছিল কনজারভেটিভ ক্যাম্পেন হেডকোয়াটার্স (সিসিএইচকিউ)-এ। ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার স্যর গ্রাহাম ব্র্যাডি। জানানো হয়, মঙ্গলবার ব্রিটেনের তৃতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন লিজ।
জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শেষ হওয়া প্রাথমিক পর্বের ভোটাভুটিতে শীর্ষস্থানে ছিলেন ঋষি। টোরি এমপিদের মধ্যে ১৩৭ জন ভোট দিয়েছিলেন ঋষিকে। লিজ পেয়েছিলেন ১১৩ ভোট। ১০৫টি ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন আর এক রক্ষণশীল নেত্রী পেনি মডান্ট।
গত ৭ জুলাই কনজারভেটিভ দলের নেতা তথা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস জনসন ইস্তফা দেওয়ার পরেই দলের অন্দরে পরবর্তী নেতার খোঁজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে মনোনয়ন দেন সাত জন। শুরু হয় ছাঁটাই পর্ব। প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি। প্রত্যেক রাউন্ডেই সব থেকে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে সরে যেতে হয়েছিল।
অবশ্য সেপ্টেম্বরে রক্ষণশীল দলের প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার সদস্যকে নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ জনমত সমীক্ষার ফলে এগিয়ে ছিলেন লিজ। তবু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশাবাদী ছিলেন ৪২ বছরের সুনক।
চূড়ান্ত রাউন্ডে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষির পরাজয়ের কারণ হিসাবে ‘বর্ণ-পরিচয়ের’ কথা উঠে আসছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী হননি। যে দেড় লক্ষাধিক কনজারভেটিভ সদস্যের ভোট এ বার দুই প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তাতে অশ্বেতাঙ্গ ভোটার নগণ্য। তিন শতাংশেরও কম। তা ছাড়া একদা জনসন অনুগামী ঋষি যে ভাবে পরবর্তীকালে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করে ইস্তফা দিয়েছিলেন, ভোটে তারও প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণ টোরি সদস্যদের বড় অংশই জনসন অনুগামী। তাঁদের একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন লিজ।