আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এবার কোপাটা ‘ট্রিপল করোনা’ নামে পরিচিত। যার অর্থ ত্রিমুকুট। মহাদেশীয় শিরোপা, বিশ্বকাপের পর আবার মহাদেশীয় শিরোপা জিতলেই নিশ্চিত এই ত্রিমুকুট। সোমবার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে এই ত্রিমুকুট এনে দিলেন লাওতারো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ডি মারিয়ার বিদায়ী ম্যাচে ১১২ মিনিটে গোল করেন লাওতারো মার্টিনেজ। তার গোলেই কোপা আমেরিকায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হল লিওনেল মেসির দল। এতে স্পেনের পর এই ত্রিমুকুট জেতা দ্বিতীয় দল এখন আর্জেন্টিনা।
ম্যাচ শুরুর আগেই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় হার্ড রক স্টেডিয়ামের বাইরে। কলম্বিয়ান ভক্তরা টিকিট ছাড়া স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করলে কনমেবল বাধা দেয়। শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা খেলা পিছিয়ে দেয়। সোয়া এক ঘণ্টা পর খেলা গড়ায় মাঠে।
ভালোয় ভালোয় খেলা শুরু হয় এবং দ্বিতীয় মিনিটে আর্জেন্টিনা সুযোগ তৈরি করেছিল। বাঁ প্রান্ত থেকে গনসালো মন্তিয়েলের ক্রস বক্সের মধ্যে খুঁজে পায় জুলিয়ান আলভারেজকে। তার নেওয়া প্রথম শটে জোর ছিল না।
ফাঁকায় বল পেয়ে ষষ্ঠ মিনিটে লুইস দিয়াজ আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ভেদ করেন। কাছের পোস্ট থেকে নিচু শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর্জেন্টাইন কিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ সেভ করেন সহজে।
পরের মিনিটে জেমস রদ্রিগেজের চমৎকার বানিয়ে দেওয়া বলে জন করদোবা অ্যাক্রোবেটিক শট নেন, যা পোস্টের বাইরে আঘাত করে। ১৩ মিনিটে কর্নার থেকে জেমসের উড়িয়ে মারা বলে কার্লোস কুয়েস্তা লক্ষ্যে হেড করেছিলেন। এবারও মার্টিনেজ বেশ ভালোভাবে ধাক্কা সামলে নেন। তিন মিনিট পর আবারও জেমস পরীক্ষা নেন আর্জেন্টাইন কিপারকে।
আর্জেন্টিনা ২০ মিনিটে কলম্বিয়ার ডিফেন্সে আতঙ্ক ছড়ায়। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার নিচু ক্রসে লিওনেল মেসি প্রথম শট নিলে তা ব্লক করেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার। ডেভিনসন সানচেজের পাসে কলম্বিয়ার কেউ পায়ে বল নিতে পারেননি, সরাসরি মার্টিনেজের হাতে চলে যায় বল।
কলম্বিয়া গোলের পরিষ্কার সুযোগ পায় ৩৩ মিনিটে। বেশ দূর থেকে জেফারসন লারমা লক্ষ্যে শট নেন। গোলমুখের সামনে ভেসে আসা বল ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আঙুলের ছোঁয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন মার্টিনেজ।
কলম্বিয়া আর্জেন্টিনার চেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের কারণে জালের দেখা পায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে মেসি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ৬৬ মিনিটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠের বাইরে যান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তার বদলি হন নিকো গনসালেস। ডাগআউটে বসে কাঁদতে দেখা যায় মেসিকে।
৭৮ মিনিটে জেমসের ফ্রি কিক ক্রসে বল পান কার্লোস কুয়েতা। তার হেড লক্ষ্যে ছিল না।
৮৮ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে নিকো গনসালেস গোলমুখের সামনে হেড করেন। আলভারেজকে শুধু বল ঠেলে দিলেই হতো, কিন্তু সময়মতো পা ছোঁয়াতে পারেননি।
ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে বক্সের মধ্যে ভালো অবস্থানে বল পেয়েছিলেন ডি মারিয়া। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পেরে শট নিতে ব্যর্থ হন আর্জেন্টাইন প্লে মেকার। স্কোর গোলশূন্য থেকে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
প্রথম ৯০ মিনিটে আধিপত্য দেখানো কলম্বিয়া ছন্দ হারায় এক্সট্রা টাইমে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায় প্রথম সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। ৯৫ মিনিটে রদ্রিগো ডি পল দৌড়ে বক্সে ঢোকেন। ব্যাকপোস্টে গনসালেসকে পেয়ে কাটব্যাক করেন। গনসালেসের দুর্বল শট সরাসরি ধরে ফেলেন ক্যামিলো ভার্গাস।
সাত মিনিট পর জায়গা খুঁজে নিয়ে জন আরিয়াস দূর থেকে শট নেন। তার শট ডিফ্লেক্টেড হয়ে মার্টিনেজের হাতে ধরা পড়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে ১০৭ মিনিটে ডানদিক থেকে ডি মারিয়ার ভাসানো ক্রস গোলমুখের সামনে পেয়েও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি লাউতারো।
পরের মিনিটে ম্যাচ সেভিং ব্লক করেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। উরাইব বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যথেষ্ট সময় নিয়ে গোলে শট নিতে চেয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে ট্যাকল করে ব্লক করেন লিসান্দ্রো।
লাউতারো বক্সের মধ্যে ঢুকে গোলকিপার ভার্গাসের শরীরের ওপর দিয়ে কোনাকুনি শটে জাল কাঁপান। ১১২ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। চলতি আসরে পঞ্চম গোল করে গোল্ডেন বুটও নিশ্চিত করে ফেলেন এই ফরোয়ার্ড।
১১৬ মিনিটে শেষবারের মতো আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাঠ ছাড়েন অশ্রুসিক্ত ডি মারিয়া। খেলা শেষ হওয়ার ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকতে বক্সের মধ্যে বোরহা পড়ে গেলে পেনাল্টি দেখার জন্য রেফারিকে জোরাজুরি করতে থাকেন কলম্বিয়ান খেলোয়াড়রা। তা আমলে নেননি ব্রাজিলের রেফারি রাফায়েল ক্লাউস। মার্টিনেজ গোল কিক নিতেই শেষ বাঁশি বাজান তিনি। আনন্দে মেতে ওঠেন আকাশী-নীল জার্সিধারীরা।
কলম্বিয়া জিতেছে ফেয়ার প্লে ট্রফি। গোল্ডেন বুট পেয়েছেন লাউতারো। আর কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপের পর এবারও গোল্ডেন গ্লাভ জিতলেন মার্টিনেজ।