রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ, জনজীবনে আতঙ্ক
রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন মামলার কারণে আদালতের উপর বাড়তি চাপ
কক্সবাজার অফিস
কক্সবাজারের উখিয়া—টেকনাফে বসবাসরত মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বর্তমানে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, মানবপাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ নানান ঘটনার সাথে জড়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি এখন নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র তৎপরতা, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
২৪ জুলাই জেলা বিচারিক প্রশাসন এসব বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা মাদক কারবার, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, মানবপাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার পাশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিসহ জনজীবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছে। দিনদিন তাদের অপরাধ কর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, গুম, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে মাত্রাতিরিক্ত মামলা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হত্যা, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তদন্তের নির্ধারিত সময়ের আগে জামিনের বিষয়ে তদবির না করে তদন্ত কার্যে সহযোগিতা করা সংশ্লিষ্ট সবার নৈতিক দায়িত্ব।
উল্লিখিত মামলাগুলোয় আসামির পক্ষে ফৌজদারি মিস মামলা মূলে জামিন বিষয়ে কোনো আদেশ প্রচারিত হলে তার পরবর্তীকালে একই আসামির জামিনের জন্য চার মাসের মধ্যে ভিন্ন কোনো ফৌজদারি মিস দরখাস্ত দাখিল করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। যদি করা হয় তাতে বিচারকের শুনানি কাজে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে স্বাভাবিক মামলা নিষ্পত্তিতে বিঘ্ন ঘটছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবালুর রশিদ আমিন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন মামলার কারণে আদালতের উপর বাড়তি চাপ কমাতে হয়তো- এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ অবস্থানরত দেশি বা বিদেশি সকলের আইনগত অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে যেখানে কোন সময়ের কথা উল্লেখ নেই যার কারণে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি সমীচীন নয় বলে জানান তিনি।
সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, বিষয়টি সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত তবে সাংবিধানিক অধিকার থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় তার জন্য নমনীয় হওয়ার আহবান জানান তারা।
বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ। কক্সবাজারবাসী রোহিঙ্গাদের নিয়ে চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে।
নিরপরাধী কোন রোহিঙ্গা এই বিজ্ঞপ্তির আওতায় থাকবে না জানিয়ে জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম আরও বলেন, যারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে যারা সাথে তাদের জন্য এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সবার জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম ও দ্বিতীয় আদালত, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জেলা বারের নোটিশ বোর্ডেও টানানো হয়েছে।