ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এর প্রভাবে টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত গোটা সুন্দরবন। রেমালের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী বনের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৬টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ এবং অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার ১৭টি হরিণকে চিকিৎসা শেষে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এখনও উদ্ধার ও অনুসন্ধান তৎপরতা চলছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের ২৫টি টহল ফাঁড়ি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো। তিনি জানান, বিশাল বনের প্রকৃত ক্ষতি বের করা সময় সাপেক্ষ বিষয়। ঝড়ে গাছপালার ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে বনের ভেতরে ৬ কোটি টাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনও উত্তাল বঙ্গোপসাগর ও সাগর উপকূলীয় বনের নদীগুলা। ফলে বনের ভেতর যেতে পারছেন না বন কর্মীরা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘এখনও আমরা সব জায়গায় যেতে পারছিনা। সাগর ও নদী উত্তাল। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ঘণ্টা জলোচ্ছ্বাস ছিল। যার ফলে অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার কথা শুনতে পাচ্ছি। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।’
এ বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে। সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভেসে গেছে। বন কর্মী, জেলে, বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণীদের জন্য সুপেয় পানির যে আঁধার ছিল সেগুলোতে লবণ পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকায় সুপেয় পানির যে পুকুরটি ছিল সেটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট যে ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় উপড়ে পড়া গাছপালার মাঝে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি হরিণের ছবি দিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, হরিণটি ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেল। আরও কত হরিণ ও বন্যপ্রাণী জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে তার কোনো হিসাব কখনও পাওয়া যাবে না।