প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু বিত্তশালীরা ভালো ভালো ফ্লাটে থাকবে, তা হবে না। আমি চাই, আমার রিকশাওয়ালারাও ফ্ল্যাটে থাকবে, দিনমজুরও ফ্ল্যাটে থাকবে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও ফ্লাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটা কাজ হচ্ছে এই তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত আইইবির ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাহাত্তর সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন ক্ষমতা হাতে নেন, তখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৭ মার্কিন ডলার। মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি যে একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন; তিনি নয় মাসের মধ্যে একটি সংবিধান রচনা করেন, ১০ মাসের মধ্যে সেটা আমরা গ্রহণ করি এবং যেখানে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের সমস্ত দিক-নির্দেশনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে তিনি উন্নীত করেছিলেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পেয়েছিল জাতিসংঘ কর্তৃক। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২৭৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছিলেন। যেটা অসাধ্য সাধন করে গিয়েছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি দেখেন, সেই সময় যারা জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতা দখল করেছিল, অবৈধভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, মার্শাল ল’ জারি করে, তাদের আমলে কিন্তু এই বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি বলতে গেলে। জিয়াউর রহমানের আমলের প্রতি বছরই ছিল মাইনাস। এরপর সর্বসাকুল্যে একানব্বই সালে এসে দেখা গেল মাথাপিছু আয় মাত্র ছয় ডলার বেড়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি, তার কারণ আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি যথাযথভাবে এবং সেইভাবে তা বাস্তবায়ন করি।’
পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য উপযোগী পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধুমাত্র একটি নির্মাণ কাজ করার জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়। এটাই আমার অনুরোধ।’ এছাড়া প্রকৌশলীদের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা, তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, শিল্পায়নের সাথে সাথে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তাহলে আমাদের নিজস্ব বিশাল বাজার, সেই বাজার আমাদের সৃষ্টি হবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।’
বাংলাদেশে একটি পরিবারও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা একেবারে তৃণমূলের মানুষগুলো পড়ে আছে, যেমন আমাদের সুইপার যারা ছিল; হরিজন বলে, দলিত বলে সব সময় একটু অন্য দৃষ্টিতেই দেখা হতো। আমরা অবশ্য নামগুলো পরিবর্তন করে দিয়েছি। এখন তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সব নামগুলো একটু পরিবর্তন করে সুন্দর নাম দিয়েছি এবং তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া শুরু হয়েছে। কাজেই অল্প খরচে সাধারণ মানুষগুলোর জন্য স্বাস্থ্যকর, সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গুণীজনদের হাতে স্বর্ণ পদক ও সনদ তুলে দেন।