জান্নাতুল ফেরদৌস
তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম রাশিয়া সফরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু তা-ই নয়, ২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর মোদিকে রাশিয়া যেতে দেখা যায়নি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দুদিনের সফরে মস্কোয় পৌঁছান তিনি। তার এ সফর বিশেষ নজরে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানান, ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে রাশিয়াকে জবাবদিহি করানোর বিষয়ে তার দেশ ভারতের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিষয়টা স্পষ্ট যে মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিনকে একসঙ্গে দেখে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি হবে না। কারণ ওই দুই দেশই মনে করে, ইউরোপে অস্থিরতার কারণ হলো ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং এর জন্য দায়ী পুতিন।
কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুমধুর। তেল, কয়লা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে আমদানি করে ভারত। মোদির সফরে তাই ইউক্রেন যুদ্ধ বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন অনেকেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রুশ সফর নিয়ে শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্র পেসকোভ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির এ সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মস্কোয় মোদির অনুষ্ঠান সাড়া ফেলবে।’
টিভি চ্যানেলের সাক্ষাত্কারে পেশকভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পশ্চিমা বিশ্ব মোদির রাশিয়া সফরকে কীভাবে দেখছে? জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, ‘ওরা হিংসায় জ্বলছে। তার মানে ওরা নিবিড়ভাবে এই সফরের দিকে নজর রাখছে। তাদের এই নজরদারিই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।’
বিবিসি বলছে, মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সেই বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমা দেশগুলো।
লন্ডনের কিংস কলেজে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।
তার মতে, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুবই আগ্রহী। এবং সেটা শুধু তাদের (ভারতের) সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই নয়, ভারত একটা বহুমেরু বিশ্বকে তুলে ধরতে চায় যেখানে তারা (ভারত) সব অংশীদারের সঙ্গে তার নিজের স্বার্থ প্রচার করার মতো অবস্থায় আছে।’
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর তিরস্কার শুনতে হয়েছে রাশিয়াকে। এমনকি, বহু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি থাকার পরও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায়নি ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেভাবে সরব হয়নি ভারত। এমনকি জাতিসংঘেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শব্দ খরচ করেনি তারা। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে যোগ দিলেও রাশিয়াবিরোধী প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেনি ভারত।