রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ : শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ও পুতিন দু’জনই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সহযোগিতার জন্য ভারতকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান
বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে রাশিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়া থেকে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারা দু’জনই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সহযোগিতার জন্য ভারতকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের দিন। রাশান ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা আমাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। রাশিয়ার সহযোগিতায় আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছি। রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ দেশটি আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থাকে (আইএইএ) ধন্যবাদ জানিয়ে কাজ করে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।
রাশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আমাদের ভারতীয় বন্ধুগণ সহযোগিতা করেছে। তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করেছে। আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আইএই এর নিয়ম মেনেই তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এতে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করব, শুধু নির্মাণেই নয় পুরোটা সময় প্রকল্পের সঙ্গে থাকবো। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোসাটমের প্রতিনিধি সার্টিফিকেট তুলে দেন। অন্যদিকে রূপপুরে অনুষ্ঠানস্থলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে ইউরেনিমার হস্তান্তরের মডেল তুলে দেন। রাশিয়া থেকে আসা ইউরেনিয়াম শুক্রবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছায়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যয় হচ্ছে– ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যার নব্বই শতাংশই রাশিয়ার ঋণ। প্রকল্প নির্মাণে কাজ রুশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে উৎপাদনে আসতে পারে। ফলে বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রায় একবছর পেছানো হয়।
রূপপুর সঞ্চালন লাইনের বড় অংশের কাজ পায় ভারত ও একটি অংশের কাজ পায় রাশিয়া। ২০১৮ সালের এপ্রিলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের সিংহভাগ ঋণ ভারতের। প্রকল্পের কাজ করছে ভারতের চারটি ও রাশিয়ার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে ৬ বছর রাশিয়া পরিচালনা করবে। এই সময়ে বাংলাদেশি দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরিবে দেশটি। প্রকল্পে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে ভারত। প্রতিবেশী ভারত পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকায় বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দেশটির সহযোগিতা চেয়েছে, এ ক্ষেত্রে ঢাকাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে দিল্লি।