বিশ্ব রাজনীতির জটিল সমীকরণের মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ এক সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। দুদিনের সফরে সোমবার ঢাকায় অবতরণ করবেন তিনি। কাতারের আমীরকে বর্ণিল বরণ করতে প্রস্তুত ঢাকাও। কূটনৈতিক একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, কাতারের আমীরের এ সফরে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে শেখ তামিমের ঢাকা সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
জানা গেছে, সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির মধ্যে আছে- ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। তালিকায় থাকা সম্ভাব্য এমওইউ’র মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ততা, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ।
২০০৫ সালে বর্তমান আমীরের পিতা (তৎকালীন আমীর) হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। দুই দশকে পরিবর্তিত বাংলাদেশে কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের এটাই প্রথম সফর। অবশ্য গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিধিদের সিরিজ সফর হয়েছে দোহায়। বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ২০১৭ সালে আরব লীগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছিল রিয়াদ। কিন্তু বাংলাদেশ সেই চাপে ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ থেকে এক চুলও নড়েনি। বরং ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাতারের বিভিন্ন সংকটে যতোটা সম্ভব পাশে ছিল বাংলাদেশ।
ফলে দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট।সেই বিবেচনায় গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কাতারের শীর্ষ নেতার এ সফর দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সফর বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আমীরের সফরে চুক্তি, সমেঝাতা বা ঘোষণা কি আসে না আসে সেটি মুখ্য নয়। বরং এই সময়ে তিনি সফরটিতে রাজি হয়েছেন- সেটাই সিগনিফিক্যান্ট।
গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এটি এখনো কার্যকর হয়নি। আমীরের সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা রয়েছে। এ মুহূর্তে কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।