রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে গতকাল শনিবার ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের দেখা মেলেনি। গত কিছুদিন ধরে চলা শীতের অনুভূতি আরো তীব্র হয়েছে। আগের দিন চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও গতকাল তা আরো এক বিভাগ ও এক জেলায় ছড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থাকতে পারে আগামী সোম-মঙ্গলবার পর্যন্ত।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রংপুর বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেছে। আজ রবিবারও তা অব্যাহত থাকতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া নওগাঁর বদলগাছীতে ৮.৯, নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী, চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির নিচে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী, রংপুর, নীলফামারীর ডিমলা ও বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি বা এর আশপাশে। ঢাকায় এ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামগ্রিকভাবে গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না আসায় গত কিছুদিন ধরে দিনের তাপমাত্রা সারা দেশে গড়ে ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি কম থাকছে। রাতের তাপমাত্রা তেমন কমেনি। এতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি অনেকটাই বেড়ে গেছে। এটা জানুয়ারি মাসে মাঝেমধ্যেই হয় এবং টানা তিন-চার দিন থাকে। এই অবস্থা আগামী সোমবার পর্যন্ত থাকতে পারে।
এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। ১৮ বা ১৯ জানুয়ারির দিকে আবার সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। তখন রাতের তাপমাত্রা কম থাকলে বা শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও এতটা শীত অনুভূত হবে না।’
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি কম ছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম, দিনে সূর্যের দেখা না পাওয়া, সারা দিন কুয়াশা থাকা এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় মানুষের শীতের অনুভূতি কমছে না। ফলে তাপমাত্রা আজ বা কাল কিছুটা বাড়লেও মানুষের শীতের অনুভূতিতে খুব একটা পরিবর্তন হবে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রবিবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল সোমবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা দুটিই কিছুটা বাড়তে পারে। মঙ্গলবার আবার কিছুটা কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা।
আগামী কিছুদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ
তীব্র শীত ও কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ, ব্যাহত হচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। উত্তরের জেলাগুলোতে পাঁচ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না বললেই চলে।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে জেলার সবচেয়ে কম তাপমাত্রা।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। পাঁচ দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়। ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
পঞ্চগড়ে গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকলেও গতকাল তা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পথঘাট।
ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েক দিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
নীলফামারীতে কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের হাতীবান্ধা গ্রামের রিকশাচালক অলিয়ার রহমান (৫৫) বলেন, ‘দিন-রাইত জারোত (শীত) কাটাছি। কামাই নাই, কম্বল কিনিবার পারেছ না।’
নওগাঁয় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। কমে গেছে আয়-রোজগারও। অনেকেই পথের ধারে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কমে গেছে আয়-রোজগারও।
শীতবস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে
তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে শীতবস্ত্রের চাহিদা। অনেক জেলাতেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল শীতবস্ত্র বরাদ্দ ও বিতরণের অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
গত বৃহস্পতিবার জরুরিভাবে ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠানো হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে এরই মধ্যে মোট ৬২ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। নতুন করে আরো ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শিশু বিভাগে ৪৫ শয্যার বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দুই শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন জানান, ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা উন্নত হওয়ায় ঠাকুরগাঁও ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার শিশু রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সকালে ফ্লাইটগুলো যথাসময়ে চলাচল করেনি। তবে দুপুরের পর কুয়াশা কিছুটা কেটে গেলে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। তবে কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি।