The news is by your side.

রক্তাক্ত জম্মু ও কাশ্মীর,  সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত

0 40

রাজনন্দিনী মল্লিক, নয়াদিল্লি

ফের গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠল জম্মু ও কাশ্মীর। মঙ্গলবারই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন। এরই মধ্যে আজ সকাল থেকেই সেনা-জঙ্গির গুলির লড়াই চলছে উধমপুরে। সেই ঘটনাতেই শহিদ হয়েছেন এক জওয়ান। জঙ্গিদের খতম করার জন্যে অভিযান এখনও জারি রাখা হয়েছে।

জানা যায়, জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরের দুদু-বসন্তগড় এলাকায় সন্ত্রাসবাদী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথ ভাবে সেখানে নিয়োজিত। বন্দুকযুদ্ধ চলছে। যদিও এখনও বিস্তারিত কোনও খবর জানা যায়নি।

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। গুলি করার আগে পর্যটকদের ধর্ম নিশ্চিত করেছিল জঙ্গিরা। সেই ঘাতকদের ধরতে মরিয়া কাশ্মীর পুলিশ। তাদের ধরতে তল্লাশিতে একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সি।

পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর মনোভাব অব্যাহত। বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করা হয়েছিল নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। ইতিমধ্যেই ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছিল।

সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে তলব করেছে ভারত। সামরিক কূটনীতিকদের জন্য আনুষ্ঠানিক পারসোনা নন গ্রেটা নোটও হস্তান্তর করেন। এর অর্থ, তিনি এমন এমন এক ব্যক্তি যিনি এই দেশে গ্রহণযোগ্য নন বা অবাঞ্ছিত। ১ মে পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও কমিয়ে পাকিস্তান ও ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত মোট কর্মীর সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সুরক্ষা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠকের পরে নয়াদিল্লির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে স্থগিত করে দেওয়া হচ্ছে সিন্ধু জলচুক্তি। যতদিন না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে লাগাম টানবে, ততদিন সেই চুক্তি স্থগিত থাকবে বলে ভারত সরকারে তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে আরও একগুচ্ছ কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে।

ভারতের বিদেশ সচিব বলেছেন, ‘অবিলম্বে আটারির ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা বৈধ নথি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছেন, তাঁরা আগামী ১ মে’র আগে পর্যন্ত ওই রুট দিয়ে ফিরে যেতে পারবেন। সার্ক ভিসা প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানিরা ভারতে আসতে পারবেন না। অতীতে কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে সার্ক ভিসা প্রকল্পের আওতায় ভিসা দেওয়া হয়ে থাকলে সেটি বাতিল বলে বিবেচনা করা হবে। ওই ভিসার আওতায় কোনও পাকিস্তানি যদি এখন ভারতে থাকেন, তাহলে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

ভারতের বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে প্রতিরক্ষা, সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনার কোনও উপদেষ্টা থাকলে তাঁকে অবাঞ্চিত হিসেবে ধরা হবে। তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হবে। একইভাবে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে সেই পদে যে উপদেষ্টারা আছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ওই ধরনের সামরিক পরামর্শদাতাদের সমস্ত পদ খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে।

সিন্ধু প্রণালী প্রধান নদী- সিন্ধু এবং পাঁচটি উপনদী: রবি, বিপাশা, শতদ্রু, ঝিলাম এবং চেনাব। এই পাঁচটি উপনদীই বাঁদিক দিয়ে ভারত হয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে এই প্রণালীর ডান তীরের উপনদীগুলি ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। রবি, বিপাশা এবং শতদ্রুকে একত্রে পূর্ব নদী বলা হয় এবং চেনাব, ঝিলাম এবং সিন্ধুকে পশ্চিম নদী বলা হয়। এর নদীগুলির জল ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে গত বছর পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক নোটিশে চুক্তির ‘পর্যালোচনা ও সংশোধন’ চেয়েছিল ভারত।

ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সিন্ধু জল কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করা প্রদীপ কুমার সাক্সেনা পিটিআইকে বলেছেন, ‘উঁচু অববাহিকার দেশ হিসাবে ভারতের কাছে একাধিক বিকল্প রয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে এটি চুক্তি বাতিলের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও চুক্তিটি বাতিল করার জন্য কোনও সুস্পষ্ট বিধান নেই, তবে চুক্তির আইন সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৬২-তে পর্যাপ্ত পরিসর দেওয়া আছে। যা বলে, পরিস্থিতির মৌলিক পরিবর্তনে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।’

এদিকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি সেচে প্রয়োজন পরে সিন্ধু, চেনাব, ঝিলামের জল। পাকিস্তানের জিডিপির ২১ শতাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। পাকিস্তানের ৪৫ শতাংশ কর্মজীবীর কর্মসংস্থানও হয় কৃষি খাতে। এই আবহে পাকিস্তান যদি সিন্ধুর জল থেকে বঞ্জিত হয়, তাহলে তাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই আবহে পাকিস্তান কী করতে পারে? সন্ত্রাসবাদী হামলা ছাড়া রাষ্ট্রসংঘ বা বিশ্বব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হতে পারে পাকিস্তান। কারণ ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে তারাও সিন্ধু জল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এই নিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দার।

বুধবার একটি নিউজ চ্যানেলকে দার বলেন, ভারত সন্ত্রাসী হামলার কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ক্ষোভের মাথায় ভারত এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারত সন্ত্রাসী হামলার কোনও প্রমাণ দেয়নি।’ ইশাক দার নাকি বলেন, ভারতে যখনই কোনও সংকট দেখা দেয়, তার জন্য পাকিস্তানই দায়ী। দার বলেন, ভারতের ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের বিবৃতি অনুপযুক্ত এবং এনএসসির পক্ষ থেকে এর জবাব দেওয়া হবে।’ ইশাক দার আরও বলেন, ‘ভারতের তরফে এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করা ঠিক নয়।’

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.