তসলিমা নাসরিন। দেড় যুগ তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে। বিদেশে বসেও থামেনি তার লেখালেখি। পেয়েছেন কলকাতার আনন্দ পুরস্কারসহ লেখিকা হিসেবে বিশ্বের অনেক পুরস্কার। আগের মতো লিখতে পারছেন না বা লিখছেন না। ‘উতল হাওয়া’, ‘আমার মেয়ে বেলা’, ‘ভ্রমর কইও যাইয়া’, বা ‘ক’ -এর মতো বই আর আসছে না। আগের মতো কাব্যও নেই, কাবিতাও না। একাধিক স্বামী ও একাধিক পুরুষের সাথে তার দেহজ সম্পর্কের কথা তো তিনি বেশ রসিয়ে লিখেছেন। কিন্তু আজকাল বয়সের কারণে নারী হিসেবে আর এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন তিনি হতাশ, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চামড়ায় বয়সের চাপ, শরীরের মধ্যে নানারকম ব্যথা-ব্যদনা তো আছেই। একাকিত্ব তাকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমনি অবস্থায় বিদেশের কোথাও থিতু হতেও পারছেন না। দেশে ফেরাও তার জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে গেছে। যেই মৌলবাদীদের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন, সেই ভয় এখনও তাকে তাড়িয়ে মারছে।
প্রশ্ন : আপনার কাছে একটা প্রশ্ন। এই যে লেখালেখি করলেন, এর মূল উদ্দেশ্য কি ছিল, দেহের স্বাধীনতা না চিন্তার স্বাধীনতা?
তসলিমা : প্রশ্ন আপেক্ষিক। আসলে আমিতো পেশায় ছিলাম চিকিৎসক। আমার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো মানে অধ্যাপক ডা. রজব আলীর মতো আমিও একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হই। শৈশবে, কৈশোর এবং যৌবনে আমি অনুভব করি, নারীরা আমাদের সমাজে ক্রীতদাসীর মতো। পুরুষরা তাদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করে। এ কারণেই বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে লেখালেখির কথা ভাবি।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্নের জবাব হলো না। কি স্বাধীনতার দাবিতে আপনার এই লড়াই?
তসলিমা : আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ যখন চাইবে, তখনই তার মনোস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে। এটা তো হতে পারে না। অথচ তখন ছুটে না গেলে জীবনের সব পূণ্য নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ভালো লেখক হওয়া যায় না। দেহের স্বাধীনতার বিষয়টা গৌণ। তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই একচেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের মতো হয়ে থাকবে, এটা মেনে নিতে পারিনি।
প্রশ্ন : আপনি পরিকল্পিতভাবে নিজেকে আলোচিত ও অপরিহার্য করে তোলেন। আজ বাংলা সাহিত্যে বা বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে আপনি তো চরমভাবে অবহেলিত।
তসলিমা : আমি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। সত্য কথা সাহিত্যে এলে তা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম প্রকাশ করে দেয়ায় অনেক বন্ধু আমাকে এড়িয়ে চলেন। বাংলা সাহিত্যের অনেক দামি দামি পুরুষও চান না যে আমি দেশে ফিরি। এক সময় আমার বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ আমি খুলে দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি চিকিৎসক থাকলেই ভালো করতেন। মিডিয়াতে কেন এলেন? সাহিত্যেই বা কেন ঢুকলেন?
তসলিমা : আমি নারীর অধিকার নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয় আমি মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি। পরিবার হারালাম, স্বামী সন্তান হলো না, ঘর-সংসার হলো না। তখন দৈনিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত না থেকে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না।
প্রশ্ন : এখন আপনি কী চান?
তসলিমা : অনেক কিছু। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন। কিন্তু দিতে পারবেন কি? আজ আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ পরাজিত। দিনে হই চই করে কাটাই, রাত হলে একাকিত্ব পেয়ে বসে। আগের মতো পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ করার মতো শরীর মন কোনটাই নেই।
প্রশ্ন : পুরানো বন্ধুরা যোগাযোগ রাখেনি? এখন কেমন পুরুষ বন্ধু আছে?