নেত্রকোণার পূর্বধলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় জানা যাবে আজ ।
পলাতক এই পাঁচ আসামি হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন (৭০)।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই আসামিদের বিরুদ্ধে।
বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেয়।
এর আগে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল গত ২৮ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেছুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুান্নি। পলাতক পাঁচ আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
সাবিনা ইয়াসমিন মুান্নি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ মামলায় সাত আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।
কিন্তু অভিযোগ গঠনের আগেই কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান আসামি আহাম্মদ আলী (৭৮)। আর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় মারা যান আরেক আসামি আব্দুর রহমান (৭০)।
“ফলে পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আদালত আজ দিন ঠিক করে দিয়েছে, আগামীকাল রায় ঘোষণা করা হবে।”
এর আগে ২৮ জানুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেছিলেন, “সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগই আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি আদালতের কাছে।”
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আসামিদের মধ্যে মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামীর নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করতেন।
খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে সর্বশেষ তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন।
কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।
আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তারা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত অভিযোগে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল এ মামলার আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
মামলা বৃত্তান্ত
নেত্রকোণার পূর্বধলার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির একাত্তরে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে হত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে একটি মামলা দায়ের মামলা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ২১ অগাস্ট বাড়হা গ্রামে আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয় ওই মামলায়।
পরে মামলাটি পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরের বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন।
২০১৬ সালের ১৬ মার্চ তিনি প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। যাচাই বাছাই শেষে ২২ মে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।
সেখানে আটজনকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
তদন্ত চলার মধ্যেই প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমানকে ২০১৫ সালের অগাস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় তাদের দুজনের মৃত্যু হয়।
বাকি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে। ওই বছর ১২ জুন শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
তার আগে ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা লড়তে গাজী এম এইচ তামিমকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল।