জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে খুনি রাশেদ চৌধুরীর নথি তলব করেছে দেশটির আদালত। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ১৫ বছর আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রাশেদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদের আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত পর্যলোচনা করার জন্য নথি চেয়ে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার। বলা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার শুরুর হওয়ায় শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের সুযোগ হারাতে পারে বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। আর তা হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। দেশে ফেরত আসলে দণ্ড কার্যকর করা হবে এ খুনির।
অনেক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। মার্কিন কূটনৈতিকদের কাছেও রাশেদকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারের এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবী।
রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট পলিটিকোকে বলেছেন, তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন কেন তারা এটি করছে?
রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেক্রামেন্টো থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরের শহর কনকর্ডের হ্যাকলবেরি ড্রাইভে বসবাস করছেন বলে জানা যায়। তবে দীর্ঘদিন তাকে জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না। বারবার স্থান বদল করে ২০১৫ সাল থেকে তিনি কনকর্ডে বসবাস করছেন। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ইলিনয় এবং মিসৌরিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বসবাস করেছেন।
জানা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি বাড়ির মালিক রাশেদ চৌধুরী। যার একটি কনকর্ডে এবং অন্যটি সেক্রামেন্টোতে। ২০১৫ সালে কনকর্ডে প্রায় চার লাখ ষাট হাজার ডলার দিয়ে কেনা বাড়িটির বর্তমান মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি দশ লাখ টাকা। ওয়ালনাট ক্রিকে ২০১৬ সালে তিনি প্রায় দশ লাখ ৪০ হাজার ডলারে বাড়িটি কিনেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১১ কোটি চার লাখ টাকা।রাশেদ চৌধুরীর দুই ছেলে রূপম জে চৌধুরী এবং সুনাম এম চৌধুরী। তার দুই ছেলেও তাদের পরিবার নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন।
রাশেদ চৌধুরী’র বড় ছেলে রূপম চৌধুরী ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়ালনাট ক্রিকে থাকেন। তার স্ত্রী কাজল এন ইসলাম এবং তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছর পরে ১৯৯৮ সালে নিম্ন আদালতের রায়ে অন্য আসামিদের সঙ্গে পলাতক অবস্থায় তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত ১২ জন কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনের রায় কার্যকর হলেও রাশেদ চৌধুরীসহ বিদেশে পলাতক অন্যদের দণ্ড কার্যকর হয়নি। এসব ঘাতকদের বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে নিয়ে দণ্ড কার্যকর করার জোরালো দাবি জানানো হচ্ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে বিচার থেকে খুনি চক্রকে রেহাই দেয় তৎকালীন সরকার। খুনিদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। রাশেদ চৌধুরীকে জাপানে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি আইন বাতিল হলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ খুলে যায়। অভিযুক্তদের বিচার শুরু হয়।
রাশেদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্ব পান।
পরে তিনি কেনিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান ও ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেন।আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধুর এ খুনিকে চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়ে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো চলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন রাশেদ চৌধুরী।