যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তিনিই এখন রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসি।
ডিস্যান্টিস নিজেকে একজন ট্রাম্প-ঘরানার রক্ষণশীল রাজনীতিক হিসেবেই তুলে ধরেন, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যেসব বদনাম, সেগুলো থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখান।
ডিস্যান্টিসকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবা হয়। রিপাবলিকান পার্টি থেকে এ পর্যন্ত যারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ট্রাম্পই এখনো পর্যন্ত জনমত জরিপে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সামনের বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি তাদের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
রন ডিস্যান্টিস হচ্ছেন ফ্লোরিডার গভর্নর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতার প্রশ্নে বেশ আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান পার্টির কট্টর রক্ষণশীলদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়, অনেকে তাকে রীতিমত রক-তারকার মতো ভক্তি করেন। তবে বামপন্থীরা তাকে একজন দক্ষিণ-পন্থী চরমপন্থী হিসেবে বর্ণনা করে।
একসময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার রাজনৈতিক গুরু মানতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি ঘটে। এখন রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এই সাবেক গুরু-শিষ্যের মধ্যে জোর লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রন ডিস্যান্টিস তার প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় একেবারেই তরুণ, বয়স মাত্র ৪৪। তিনি রাজনীতিতেও বলতে গেলে নবাগত। তিনি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১২ সালে। মাত্র ছয় বছর পর ২০১৮ সালে তিনি ফ্লোরিডার গভর্নর নির্বাচিত হন।
ডিস্যান্টিসের জন্ম ১৯৭৮ সালে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ছিলেন। পরে তিনি হার্ভার্ড ল স্কুলেও পড়েছেন। সেখানে দ্বিতীয় বর্ষে থাকার সময় তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি নৌবাহিনীর আইন শাখা জাজ এডভোকেট জেনারেল (জ্যাগ) বিভাগে কাজ করেন। এই বিভাগে থাকার সময় তাকে গুয়ানতানামো বন্দী শিবিরের বন্দীদের নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এছাড়া ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যে নেভি সীলস টিম মোতায়েন করা হয়েছিল, তাদেরও আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
ডিস্যান্টিসকে ২০১০ সালে মার্কিন নৌবাহিনী থেকে সসম্মানে বিদায় দেওয়া হয়। তবে এরপরও তিনি নৌবাহিনীর একজন রিজার্ভ সেনা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরকম একটা সময়েই স্ত্রী কেসির সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। কেসি তখন স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার।
নৌবাহিনী থেকে অবসরে যাবার পর ডিস্যান্টিস একজন ফেডারেল কৌসুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি ফ্লোরিডার একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এটিকে ফ্লোরিডার সবচেয়ে বেশি রক্ষণশীল প্রভাবিত আসন বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রথম যখন তিনি ফ্লোরিডার রাজনীতিতে নামেন, তখন তিনি ‘ছোট আকারের সরকার’ এবং কর কমানোর কথা বলে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ওবামা প্রশাসনের এক কঠোর সমালোচক।
সরকার যে তার ভাষায় ‘শিশুদের শারীরিক স্থূলতা থেকে শুরু করে বিশ্বের তাপমাত্রা- সমস্ত বিষয়ে নাক গলাতে চায়’, সেটার কড়া সমালোচক ছিলেন ডিস্যান্টিস।
কংগ্রেসে পাঁচ বছর কাজ করার পর ২০১৮ সালে তিনি কট্টর রক্ষণশীল কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে ‘ফ্রিডম ককাস’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করেন। এসময় তিনি ফ্লোরিডার গভর্নর পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেন।
নির্বাচনে রন ডিস্যান্টিসের প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব ছিল খুবই স্পষ্ট।
একটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে ডিস্যান্টিসকে তার নিজের সন্তানের সঙ্গে বিল্ডিং ব্লক নিয়ে খেলার সময় বলতে দেখা যায়, ‘বিল্ড দ্য ওয়াল’, অর্থাৎ দেয়াল তৈরি করো। এটি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় এক বড় শ্লোগান। নিজের আরেক ছেলের সঙ্গে বই পড়ার রন ডিস্যান্টিসকে দেখা যায় ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ সাইনের সঙ্গে। এটিও ছিল ট্রাম্পের নির্বাচনী শ্লোগান।
ডিস্যান্টিস ফ্লোরিডার গভর্নর হিসেবে শপথ নেন ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে।
যেভাবে তিনি ফ্লোরিডায় কোভিড মহামারির মোকাবেলা করেন, সেজন্যে শুরুতেই তিনি জাতীয়ভাবে সবার নজর কাড়েন। মহামারির শুরুতেই তিনি পুরো রাজ্য জুড়ে লকডাউন জারি করেছিলেন, তবে শীঘ্রই আবার তিনি বিধি-নিষেধ তুলে নিতে থাকেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন তিনি ফ্লোরিডায় স্কুল খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।
ফ্লোরিডায় তার পর থেকে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার, মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রশ্ন আরও কঠোর দক্ষিণপন্থী অবস্থান নেন, এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালান। তিনি ছয় সপ্তাহের বেশি গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেন।
তবে তার রাজনৈতিক পরিচিত এবং খ্যাতি যখন বাড়তে শুরু করে, তখন আবার সাবেক রাজনৈতিক গুরু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
সাম্প্রতিক কিছু জরিপে দেখা যায়, মি. ডিস্যান্টিস এখনো রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তার পাল্লায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। মি. ডিস্যান্টিস অবশ্য বলার চেষ্টা করছেন যে, রিপাবলিকানদের হোয়াইট হাউজে ফিরিয়ে নিতে তিনিই হচ্ছেন সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।