The news is by your side.

যান চলাচলের জন্য সাত উড়ালপথের দুয়ার খুলছে আজ

0 71

 

চলতি বছরের শেষ দিকে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হতে পারে। তবে কারিগরি আরো অনেক কাজ বাকি থাকায় বিআরটি পথে বাস চলাচলে দেরি হবে। আজ রবিবার সড়ক ও জনপথের অংশে নির্মিত সাতটি উড়ালপথ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে বিআরটির মতো পরীক্ষিত গণপরিবহন ব্যবস্থা দেশে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে; যেমন—মূল সড়ক সরু করে ফেলা, ফুটপাতের কাছে বাসস্ট্যান্ড তৈরি, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় সঠিক পরিকল্পনার অভাব, নির্মাণকাজের ধীরগতি এবং পরিচালন দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব।

বিআরটি মূলত বাসের মতো গণপরিবহন চলাচলের জন্য একটি বিশেষায়িত পথ, যেখানে বিআরটি কম্পানির অধীনে নয়, এমন কোনো বাস চলার সুযোগ পাবে না। এতে গণপরিবহনে গতি তৈরি হবে—এমন ভাবনা থেকেই সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিল।

এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, মূল কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। কভিড ছিল দুই বছর।

দুর্ঘটনার জন্য ছয় মাস কাজ করা যায়নি। আবার এই পথে বাইপাস করা যায় না। গত দুই-আড়াই বছরে কাজের গতি খুব ভালো। যতটুকু অংশের কাজ শেষ হচ্ছে, ততটুকু চালু করে দেওয়া হচ্ছে।

ঈদের আগে ময়মনসিংহের পথে চলাচলে সমস্যা হবে না।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান অনেক দূরে—এমন প্রসঙ্গে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বিশেষায়িত বাস চালুর জন্য দ্রুতই আবার দরপত্র আহবান করা হবে। আগের দরপত্র প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়েছিল। আশা করি, ডিসেম্বরের মধ্যে বিআরটির অধীন বাস চালাতে পারব।

রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে দ্রুতগতিতে বাস চালানোর জন্য ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

এরপর চার দফায় সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। একই সঙ্গে দুই দফায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার যখন অন্য অনেক প্রকল্প চালু করছিল, তখন বিআরটি চালু হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। কিন্তু তা হয়নি।

বিআরটি কম্পানির চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হতে পারে। তবে অপারেশনের কাজ শুরু করার জন্য আরো অনেক কাজ বাকি থাকবে। শুধু সড়কের কাজ শেষ করলেই তো হবে না, বাস চালানো হচ্ছে মূল লক্ষ্য। এ বছর বাস চালানো সম্ভব না-ও হতে পারে। এখনো কোনো কম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়নি।

সময়-খরচ দুই-ই বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

একনেকে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

পরে আবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বাড়তি মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময় ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। বারবার সময় ও খরচ বাড়লেও কাজ আর শেষ হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। অর্থায়নও স্বাভাবিক না। আবার ব্যস্ত সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় কাজে ধীরগতি তৈরি হয়েছিল।

তিন সংস্থার কাজ, সড়কের গতি সবচেয়ে কম

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সমন্বয়ে চারটি প্যাকেজে প্রকল্পটির কাজ চলছে। এর মধ্যে সবার আগে নিজেদের কাজ শেষ করেছে এলজিইডি। সবচেয়ে ধীরগতি সড়কের অংশে।

সড়কের অংশের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরের আগস্টের দিকে প্রকল্পের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে টঙ্গীমুখী সড়কের তিন জায়গায় স্প্যানের সংযোগস্থলের পিচ ঢালাই উঠে যায়। এতে সংযোগস্থলের যে পাত ছিল, তা বেরিয়ে আসে। এমনকি উড়ালপথের একাধিক সংযোগস্থলের পিচ ঢালাইয়ে ফাটল ধরে। ঢালাই উঠে যাওয়ায় স্টিলের দুই পাতের মাঝে গর্ত তৈরি হয়েছিল।

এখনো বাস চালানোর চুক্তি হয়নি

বিআরটি সূত্রে জানা যায়, বাস চালাতে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। নাম ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেড কম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে শুরুতে ৭৫টি বাস চলানোর পরিকল্পনা ছিল। কম্পানির বাণিজ্যিক কাজের ধরন কেমন হবে, সেটি নির্ধারণে ২০১৯ সাল থেকে বিজনেস মডেল তৈরির কাজ করা হয়।

কিন্তু কাদের বাস চালাবে, বিআরটি কম্পানি এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই পথের জন্য নতুন বাস আমদানির কথা থাকলেও তাতে ভাটা পড়েছে। দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস চালানো হবে কি না, সেটিও চূড়ান্ত হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় না হলে শুরুতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস দিয়ে চলা চল শুরু হতে পারে।

বিআরটি পথ চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুরে নিয়মিত চলাচল করে, এমন আটটি রুটের বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ আবদুল্লাপুর পর্যন্ত সিটি বাসগুলো চলাচল করতে পারবে। তবে গাজীপুর থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত চলাচল করে এমন ১০টি রুটের বাস আগের মতোই চলতে পারবে। আবার বিআরটি লেনের দুই পাশের লেনে সিটি বাস চলাচল করার সুযোগ থাকছে।

পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি অবকাঠামোভিত্তিক প্রকল্প নয়। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নভিত্তিক প্রকল্প। এমন প্রকল্প তাদেরই বাস্তবায়ন করা উচিত, যারা পরবর্তী সময়ে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকবে।

বিশেষায়িত বাসের পথ তৈরিতে যা যা হয়েছে

বিআরটি লেনের পাশাপাশি পথটিতে দুই দিকে দুটি করে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক হালকা যান চলার পথ, একটি করে অযান্ত্রিক যান চলাচলের পথ এবং দুই পাশে ফুটপাত থাকছে।

প্রকল্পে উড়ালপথে থাকবে ছয়টি স্টেশন এবং ১০ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী সেতু। ছয়টি উড়াল সেতু থাকছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার সমতলে এবং সাড়ে চার কিলোমিটার উড়ালপথ নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১১৩টি সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। জলজট নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নালা থাকছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.