জরুরি পরিষেবা ছাড়া রাত ৮টার পর রাজধানীতে সব দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ রাখতে চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার নগরভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা করেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মেয়র তার নেওয়া পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন। কতদিনের মধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, হয়তো আগামীবার আমি থাকব না। সংসদেও যেতে হতে পারে। মেয়র হিসেবে যিনি আসবেন তিনি সেই পরিল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবেন। আমি শুরুটা করে দিয়ে গেলাম।
রাজধানীর যানজট বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রাত ৮টার পর দোকানপাটসহ সব কিছু বন্ধ করলে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এটি কার্যকর করতে পারলে আমরা পরিবারকে আরো বেশি সময় দিতে পারব। পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
দেশে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক নম্বরে থাকবে দাবি করেছেন তাপস। তিনি বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই দুর্নীতি মুক্তির দিক থেকে আমরা অবস্থান তৈরি করেছি। যদি সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয় তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি এক নম্বর প্রতিষ্ঠান হবে ডিএসসিসি। অগ্রযাত্রার দিক থেকে ডিএসসিসিকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন (ট্রেড লাইসেন্স) ছাড়া ব্যবসা করতে পারবে না। সবাইকেই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমোদন নিতে হবে। কীভাবে বাজার পরিচালনা হবে, কয়টি বাজার থাকবে এগুলো সব আমরা একটি নীতিমালার আওতায় আনবো এবং এসব বাজারগুলোকে নিবন্ধন দেবো।
জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র বলেছেন, আশা করছি এ বছর রাজধানীতে জলাবদ্ধতা আগের চেয়ে কম হবে। আগে এক ঘণ্টা সময় লাগলে এবার আধা ঘণ্টার মধ্যে পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আমরা অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পেরেছি। অনেকে অনুমতি চেয়েছে রাস্তা খোঁড়ার। কিন্তু আমরা বর্ষার আগে কোথাও খুঁড়তে অনুমোদন দেইনি। বলেছি সেপ্টেম্বরের আগে কোনো রাস্তা খুঁড়তে দেওয়া হবে না।
মেয়র জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএসসিসির রাজস্ব আদায় অনেকটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৬৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫২৪ কোটি টাকা ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
তিনি আরো জানান, রাজধানীর কালুনগর খাল, জিরানী খাল, মান্ডা খাল ও শ্যামপুর খাল পরিষ্কার ও খননসহ পাড় ঘেঁষে পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ, খেলার মাঠ ও শিশু উদ্যান স্থাপনসহ সকলের জন্য একটি নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির কাজ চলছে। এ জন্য ৮৯৮ দশমিক ৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে বিবেচনাধীন রয়েছে। পুরান ঢাকা ও কামরাঙ্গীরচরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার করে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে ২৪ কোটি টাকা বায়ে পলি অপসারণ, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার এবং দুপাশের সীমানা নির্ধারণের কাজ আগামী মাসে শুরু হবে। এছাড়া গত দুই বছরে অবৈধ দখলে থাকা বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান ডিএসসিসি মেয়র।