The news is by your side.

মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সহজ হবে না

0 57

 

ড. আতিউর রহমান

 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই বাজেটের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানো মোটেই সহজ হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আমাদের সংসদ কার্যক্রমের আওতায় বাজেট প্রতিক্রিয়া অধিবেশন ‘কেমন হলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট’ শীর্ষক সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে ব্যাংক এশিয়া ও উন্নয়ন সমন্বয়।

অনুষ্ঠানে ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। গত মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। সার্বিক মূল্যস্ফীতিও প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এই বাস্তবতায় সাড়ে ৩ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা মোটেও সহজ হবে না।

এ জন্য বাজেট ঘাটতি ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের পরিমাণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। বাড়তি ব্যয়ের চাপ না নিলে, বাজেট ঘাটতি আরো কম হতো। তাতে অন্তত দেশীয় ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমত।’

বাজেটের প্রায় সব খাত নিয়েই ড. আতিউর রহমান মতামত দেন। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে যথেষ্ট কৌশলের সঙ্গেই এবারের বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে দেখে একে বাস্তবতার প্রতি অনেকটা সংবেদনশীলই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে এই বাজেটটিতে কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ ছিল। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ, যা উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিরাজমান বিনিয়োগ খরার মধ্যে এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন দুরূহ।

আতিউর রহমান বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাজেটে সংকোচনমুখিতার পক্ষে। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাত, কৃষি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সহায়ক খাতে প্রকল্পে বরাদ্দে এই কাটছাঁটের প্রভাব যতটা সম্ভব কম করা কল্যাণকর। আসছে বছরে সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোর মতোই মোট বরাদ্দকে বিভিন্ন খাতগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বলা যায়, কাটছাঁটের প্রভাব সব খাতেই সমানভাবে পড়েছে। এ কারণেই আমরা মনে করছি, বাজেটটি বাস্তবানুগ হলেও এটিকে আরেকটু কল্যাণমুখী করার কথা ভাবা যেত। আরেকটু ন্যায়ানুগ করার সুযোগ ছিল। স্বাস্থ্যে বরাদ্দের অনুপাত বাড়ানো গেলে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির এই সময় জনগণ স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ থেকে কিছুটা সুরক্ষা পেত। মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দে আরো উদার হওয়া যেত। সামাজিক সুরক্ষায় বাজেটের ১৭.০৬ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে। চলতি বছরে ছিল ১৬.৫৮ শতাংশ। এর পুরোটাই বিপন্ন মানুষের জন্য নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, বিভিন্ন বৃত্তির বরাদ্দও এখানে আছে। চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রান্তিক নাগরিকদের সুরক্ষার্থে এর অনুপাত বাড়ানো যেত।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বোর্ডকে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তার মাত্র ৩৭ শতাংশের মতো আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে। উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পথে বাধা। রাজস্ব বোর্ড তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশের জন্যই নির্ভর করবে পরোক্ষ করের ওপর। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিকতা থেকে বেরোনো সম্ভব হয়নি। যাঁরা কর দিচ্ছেন তাঁদের ওপর আর বোঝা না চাপিয়ে, নতুন করদাতাদের যুক্ত করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.