মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারবাহিকতায় ঋণের সুদহার আরো বাড়ানো হলো। এবার নীতি সুদহার বা রেপো রেট এক লাফে ০.৫০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহার ৭.২৫ শতাংশ।
ফলে নতুন নীতি সুদহার বা রেপো রেট হবে ৭.৭৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন সুদহার আজ থেকে কার্যকর হবে।
রবিবার এই সিদ্ধান্তের কথা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭.২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএসএফ) সুদহার বিদ্যমান ৯.২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান ৫.২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫.৭৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে।
পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরো সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল। সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহী হয়।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়, তা ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত।
প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম অনুযায়ী, এত দিন ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে পরবর্তী মাসের ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হতো। এখন তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩.৭৫ শতাংশ যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭.৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩.৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে ঋণের সুদহার হবে ১১.১৮ শতাংশ।
সেই হিসাবে চলতি নভেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১১.১৮ শতাংশ সুদ নেওয়া যাবে। তবে নভেম্বরের ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম সভা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম অংশ নেন।
সভায় অভ্যন্তরীণ, বৈশ্বিকসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।